আগাম তরমুজ চাষে পটুয়াখালীতে কৃষকের মুখে হাসি

সঠিক পরিচর্যা আর ঘাম ঝড়ানো প্রচেষ্টায় আগাম তরমুজ চাষে বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালী এলাকার কৃষকের মুখে। বাজারে তিনমাস আগেই তরমুজের পসরা সাজিয়ে ভালো দাম হাকাতে পারছেন এসব প্রান্তিক চাষিরা। ফলে করোনার ধকল কাটিয়ে এবছর উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কাঙ্খিত মুনুফার আশা করছেন কৃষকরা।

ফলন আশানুরুপ ভালো হওয়ায় স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাইকারী বিক্রি করছেন আগাম তরমুজ উৎপাদনকারীরা।

জানা গেছে, উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকায় আগাম তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। কোনো ধরনের রোগ বালাইয়ের তেমন প্রকোপ না থাকায় বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত বেশ আনন্দেই শ্রম দিয়েছেন সৃজনশীল চাষিরা। পরিপক্ক ফসল এখন পাইকারী ও খুচরা বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন তারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রসালো মিষ্টি ফল কিনতে আসা পাইকাররাও তরমুজ নিয়ে ফিরছেন হাসি মুখে, চড়া দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে। অনেক পাইকারী ক্রেতারাই কৃষকের উৎপাদিত তরমুজ ক্ষেত অগ্রিম ক্রয় করা শুরু করেছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কুয়াকাটা সমুদ্র উপকূলের তরমুজ মিষ্টি ও সু-স্বাদু হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে বেশ। স্থানীয় বাজারেও এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।

কথা হলে লতাচাপলী ইউপির তুলাতলী গ্রামের চাষী রাজ্জাক মুসুল্লী জানান, প্রায় ৪ মাস আগে প্রায় ১৩ একর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ শুরু করেন। কনকনে শীত এবং গা ঝলসানো রোদ উপেক্ষা করে কঠোর পরিশ্রম’র পর ক্ষেতে বাম্পার পলন হয়েছে। তিনিসহ মোট ছয় ভাই মিলে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে সফলতার হাতছানি পান। বর্তমানে ক্ষেত ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। উৎপাদন খরচ প্রায় ৯ লাখ টাকা বাদেও তাদের ছয় লাখ টাকা আয় হয়েছে।

আগামিতে আরো ব্যাপক হারে আগাম তরমুজ চাষের কথা জানান তিনি।

ধুলাসার ইউপির চাষী মো. মোদাচ্ছের হাওলাদার জানান, তিনি ৪ একর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। উৎপাদন খরচ আড়াই লাখ টাকা বাদ দিয়েও ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এখনও পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। ক্ষেতে এখনও প্রায় ২ লাখ টাকার তরমুজ রয়েছে। তা ভালো দাম পেলেই বিক্রি করবেন। তবে কৃষি অফিষ থেকে সহযোগীতা পেলে আগাম তরমুজ চাষে সম্প্রসারন হবে বলে মনে করছেন এই চাষি।

এদিকে, মহিপুর বন্দরের ব্যবসায়ী মো. কালাম হোসেন’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত বছর করোনাকালীন সময়ে তরমুজের বাজার মন্দা থাকায় দাম ছিলো পড়তির দিকে। তেমন বিক্রি না হওয়ায় লাভ করতে পারেন নি তিনি। এবছর আগাম তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। ক্রেতারাও ভালো দাম দিয়ে কিনছে। আশা করছি লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো।

কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী এবছর উপজেলার কুয়াকাটা, লতাচাপলি. মহিপুর, নীলগঞ্জ, ধানখালীসহ বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন আগাম চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, এ উপজেলায় আমরা সার্বক্ষনিক চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবারে বাম্পার ফলন হচ্ছে। আগাম তরমুজ চাষীরা বেশি দামে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষকরা যাতে ন্যায্য মুল্যে তরমুজ বিক্রি করতে পারে এজন্য কৃষকদের পাশে থেকে ইউনিয়ন পর্যায় কৃষি কর্মকর্তারা সহযোগিতা করছেন।

ছবিতে..