সীমান্তে মুখোমুখি চীন-ভারতের ৮ হাজার সেনা

সিকিম-তিব্বত-ভুটান সীমান্তে ডোকা লা এলাকায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে। দুদেশের প্রায় আট হাজার সেনা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ভারতের সেনা সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সেনারা সীমান্তে ভারতীয় দুটি বাঙ্কার গুঁড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর দুইবার ফ্ল্যাগ মিটিং হয়। কিন্তু এরপরেও ২২ দিনের অচলাবস্থা কাটছে না।

ভারতীয় এক সেনা কর্মকর্তার কথায়, ‘নো ওয়ার-নো পিস অবস্থা। কিন্তু পরিস্থিতি যেকোনো সময় অন্য দিকে ঘুরে যেতে পারে।’
পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে বৃহস্পতিবার সিকিম যাওয়ার কথা রয়েছে ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের।

প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর ১৪ হাজার ফুট ওপরে চীন, ভারত ও ভুটান সীমান্তে ডোকা লা মালভূমি এলাকায় ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) মোতায়েন থাকে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে তাদের শিবির ১৫ কিলোমিটার ভেতরে।

ভারতীয় সেনা সূত্রের দাবি, ডোকা লা ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে হলেও চীন ওই এলাকায় রাস্তা নির্মাণের ছক কষেছে। ফলে ওই সীমান্তে টহলদারি বাড়াতে হয়েছে ভারতীয় সেনাদেরকে।

১৯৬২ যুদ্ধের পর থেকেই ওই অঞ্চলে অনেক অস্থায়ী বাঙ্কার রয়েছে ভারতের। টহলদারির সময় সেখানে জওয়ানরা বিশ্রাম নেন। মাস দুয়েক আগে চীনা সেনারা এসে ডোকা লা’র লালটেন এলাকার বাঙ্কারগুলো ভেঙে দিতে বলে। তবে ভারত তাতে কর্ণপাত করেনি।
সেনা সূত্রের খবর, তার পর থেকেই দুই বাহিনীর মধ্যে তৎপরতা বাড়তে থাকে। একেবারে উত্তরের ‘ফিঙ্গার টিপ’ অঞ্চল ছাড়া সিকিম সীমান্তে আর কোথাও কখনো আগে এমনটি হয়নি। দুপক্ষের সেনা ডোকা লা অঞ্চলে বার বার সামনাসামনি চলে আসতে থাকায় উত্তেজনা বাড়ে।

ভারত সীমান্তে প্রবেশ করে চীন কেন রাস্তা তৈরি করছে, তা নিয়েও প্রতিবাদ জানায় ভারত। ৬ জুন এ নিয়ে ফ্ল্যাগ মিটিংও হয়। কিন্তু এর দুদিন পরেই ৮ জুন চীনা সেনারা ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে দুটি বাঙ্কার গুঁড়িয়ে দেয়।

এর পরেই ভারতের গ্যাংটকের ১৭ নম্বর ব্ল্যাক ক্যাট ডিভিশন থেকে এবং পরে সুকনার কোর কম্যান্ডারের অফিস থেকে বাড়তি সেনা পৌঁছায় ওই এলাকায়। সব মিলিয়ে চার ব্যাটেলিয়ন সেনা মোতায়েন করা হয়।

জবাবে চীনও প্রায় সমসংখ্যক বাড়তি সেনা নিয়ে আসে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারত ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের অনুরোধ করে। কিন্তু কোনো জুনিয়র অফিসারের উপস্থিতিতে বৈঠক করতে চায়নি চীন।

শেষ পর্যন্ত ২০ জুন চীনের এক মেজর জেনারেল এবং ভারতের এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের উপস্থিতিতে সেই বৈঠক হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। কারণ, চীন কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে পিছিয়ে যেতে নারাজ।