সীমাহীন কারচুপির অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করলো বিএনপি

সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘সীমাহীন কারচুপি’র অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) সারাদেশের জেলা ও মহানগরগুলোতে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে দলটি।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফল প্রত্যাখ্যান করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ‘এই তামাশা ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি এবং অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট এই ৩টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের নাটক শেষ হলো। এই নির্বাচনে আমাদের কথাই সত্য প্রমাণিত হলো- শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না। প্রমাণিত হলো- এই অযোগ্য নির্বাচন কমিশিনের পরিচালনায় কোনো নির্বাচনই জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব নয়। গাজীপুর ও খুলনার মতো এই তিনটি সিটি কর্পোরেশনে ভোট চুরি বা কারচুপি নয়, ভোট ডাকাতির মহৌৎসব অনুষ্ঠিত হলো।’

তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিপক্ষ এই অবৈধ সরকারের প্রশাসন এবং অযোগ্য নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন পুলিশের মতোই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। শুধু নির্বাচনের দিনে নয়, সিডিউল ঘোষণার দিন থেকেই পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড মাঠে নেমেছে। মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হয়রানি, হুমকি ও ভয় দেখিয়ে বিরোধীদলের কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দূরে রাখা, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব আইন ভঙ্গ, শত শত অভিযোগে কোনো কর্ণপাত না করে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে আবারও ধ্বংস করলো।’

ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই আমরা বলে এসেছি- এই কমিশন আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এবং অযোগ্য। তারা আচরণ বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের নির্যাতন বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানতে পুলিশকে বাধ্য করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘বরিশালে কয়েকদিন আগে থেকেই বাইরে থেকে হাজার হাজার আওয়ামী কর্মী জড়ো করা হয়েছিল, কেন্দ্রগুলো থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করছে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করছে। তাদের লক্ষ্য একটি- একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ভিন্নরূপে প্রতিষ্ঠা করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন একটি গণবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে তারা জয়ী হতে পারবে না বলেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করে তারা জাতীয় সংসদের নির্বাাচন করতে চায়। তারা ২০১৪ সালের মতোই একতরফা নির্বাচন করার নীলনক্শা করছে। কিন্তু জনগণ তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই গণতন্ত্রের মাতা, আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় সকল বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সরকারকে আহ্বান জানাবো- কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে উপরোক্ত দাবিগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনিপর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম আমান উল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভ আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর শরফত আলী শপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।