সেই তরুণীকে উদ্ধার করা কনস্টেবলের খোঁজে পুলিশ

আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের সমাবেশে যাওয়ার পথে বাংলামোটরে একটি মিছিল থেকে এক কলেজছাত্রীকে যৌনহয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর রয়েছে, পরে এক ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল তাকে কোনো রকমে উদ্ধার করে বাসে তুলে দেন।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে রমনা থানায় মামলাও হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি হয়। রেকর্ড করা হয় ওই ছাত্রীর জবানবন্দি। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতারে ওই ট্রাফিক কনস্টেবলকে খুজেঁ পেতে চেষ্টা করছে পুলিশ।

জানা গেছে এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সগুলোয় পাঠানো হয় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ওই ট্রাফিক কনস্টেবলের ছবি।

এখনও পর্যন্ত ওই কনস্টেবল সম্পর্কে যতদূর জানা যাচ্ছে তা হলো তিনি ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছে, অন্যখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং ঘটনার সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

ডিএমপির রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ইহসান ফেরদৌস গণমাধ্যমকে জানান, ট্রাফিক পুলিশের যে কনস্টেবল ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বাসে তুলে দিয়েছিলেন, ভিডিও ফুটেজ থেকে তার ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মুখে মেহেদী দেয়া লাল দাড়ি থাকার বিষয়টি বোঝা গেলেও এখনো তাকে শনাক্ত করা যায়নি।

যেভাবে ঘটনা জানাজানি হলো
গত ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি মিছিল থেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে- এমন অভিযোগ করে লেখা ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টির নিন্দা আসে।

এরপর বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলামোটরের ঘটনার শিকার ওই কলেজছাত্রী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘শান্তিনগর মোড়ে একঘণ্টা দাড়ায় থেকেও কোন বাস পাইলাম না। হেটে গেলাম বাংলামটর। বাংলামটর যাইতেই মিছিলের হাতে পড়লাম। প্রায় ১৫-২০জন আমাকে ঘিরে দাড়াইলো। ব্যস! যা হওয়ার থাকে তাই। কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়েকে হ্যারাস করতেসে এটা কেউকেউ ভিডিও করার চেষ্টা করতেছে। আমার কলেজ ড্রেসের বোমাত ছিঁড়ে গেছে, ওড়নার জায়গাটা খুলে ঝুলতেছে। ওরা আমাকে থাপড়াইসে। আমার শরীরে হাত দিসে। আমার দুইটা হাত এতগুলা হাত থেকে নিজের শরীরটাকে বাঁচাইতে পারে নাই।’

এই স্ট্যাটাসটি মুহূর্তেই অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর ওই তরুণী স্ট্যাটাসটি ‘অনলি মি’ করে নিজের প্রোফাইলে লিখেছেন, ‘আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। পোস্টটা অনলি মি করেছি কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দেইনি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং) বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেয়েটির পোস্ট ভুয়া নয়। তার কাছ থেকে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তার দেয়া বর্ণনা ও ঘটনার সময় অনুযায়ী শাহবাগ, শান্তিনগর, বাংলামটরসহ এর আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ঊর্ধ্বতনরা। তদন্ত চলছে।’