স্টেশনে একসঙ্গে ৮ ট্রেন, পদপিষ্টে নিহত ২

পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছি রেলস্টেশনে একসঙ্গে তিনটি দূরপাল্লার ট্রেন এবং কয়েকটি লোকাল ট্রেনের ঘোষণায় ঠেলাঠেলিতে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন দুজন। আহত হন কমপক্ষে ১৪ জন। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ফলে বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা।

সাঁতরাগাছি রেলস্টেশনে মোট ছয়টি প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ মাত্র দুটি। সংকীর্ণ সেই ফুটওভার ব্রিজে হুড়োহুড়ি করতে গিয়েই পদপিষ্ট হয়ে এদিন এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

রেল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ সাঁতরাগাছি রেলস্টেশনে একই সঙ্গে একাধিক দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেনের ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণা শুনে তড়িঘড়ি ট্রেন ধরার জন্য ওভারব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা প্রবল হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন।

জানা যায়, ১ থেকে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সংযোগকারী ফুটওভার ব্রিজের ওপর চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। কয়েক ফুট চওড়া ফুটওভার ব্রিজের ওপর থেকে নিচে নেমে ট্রেন ধরার জন্য শুরু হয় যাত্রীদের তুমুল ঠেলাঠেলি। সে সময় ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িতে পড়ে যান ২০ থেকে ২৫ জনের মতো যাত্রী। সেই যাত্রীদের ওপর হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ে বাকি যাত্রীদের ভিড়। ফলে মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায় দুর্ঘটনা।

এদিন সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে পরপর ডাউন নাগেরকোয়েল-শালিমার গুরুদেব এক্সপ্রেস, হাওড়া-বেলদা-জলেশ্বর এক্সপ্রেস, শিমলিপাল এক্সপ্রেস, হাওড়া-মেদিনীপুর ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হাওড়া-আদ্রা প্যাসেঞ্জার, বিশাখাপত্তনাম এক্সপ্রেস, চেন্নাই এক্সপ্রেস এবং হাওড়া-আমতা লোকাল ট্রেনের ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার আগে থেকেই যাত্রীরা ওভারব্রিজের ওপর অপেক্ষা করছিলেন। ট্রেনের ঘোষণা হওয়ামাত্রই ওভারব্রিজের ওপর থেকে বিভিন্ন স্টেশনে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা তুমুল হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন। ওভারব্রিজের ছোট সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার জন্য অনেকেই এর ওর গায়ের ওপর ধাক্কা দেন। যার ফলেই সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যান অনেকে। ঘটে যায় দুর্ঘটনা। আতঙ্কে শুরু হয়ে যায় পদপিষ্ট যাত্রীদের চিৎকার-চেঁচামেচি। সিঁড়ির রেলিং ধরে অনেকে প্ল্যাটফর্মের ওপর লাফিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা তাশার সরদার (৬৩) ও পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা কমলাকান্ত সিংহ (৪২)। পরে হাসপাতালে তাঁরা মারা যান বলে জানা যায়। ঘটনায় তিনজন নারী ও দুজন শিশুসহ আহত হন প্রায় ১৪ জন।

এ ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন রেলের আধিকারিকরা। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে। এদিন সাঁতরাগাছি স্টেশনে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই কলকাতার রেড রোডের দুর্গা কার্নিভাল থেকে সোজা ঘটনাস্থলে চলে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, রেলের উদাসীনতা এবং গাফিলতির কারণে ভারতে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজ্য প্রশাসনিক স্তরে সাঁতরাগাছি স্টেশনে দুর্ঘটনার তদন্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

এই দুর্ঘটনায় ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, রেল এই দুর্ঘটনার তদন্ত করবে। রেল মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি, গুরুতর আহতদের এক লাখ রুপি এবং কম আহতদের ৫০ হাজার রুপি আর্থিক সাহায্য দেবে।