১৪ দলের শরিকদের চাওয়া এবার বেশি আসন পাওয়া

ঘনিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটের শরীকরা আসন নিয়ে এখন থেকেই দরকষাকষি শুরু করেছে। শবীকরা এবার বিগত বছরের চেয়ে বেশি আসন চান।খবর জাগো নিউজের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে শরীক নেতারা ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি শরীকদের আশ্বাস দিয়েছেন-তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরিক দলগুলো এরই মধ্যে যে যে আসনে নির্বাচন করতে চায়, তার তালিকা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কোনো বৈঠকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আসন বণ্টনের বিষয়টি ওঠেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন সমীকরণ চলছে। যেখানে আওয়ামী লীগ ও শরীকদলের প্রভাবশালী নেতা আছেন সেখানকার বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব আছেন জোটের নেতারা। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আগেই আলাপ আরোচনা করতে চাচ্ছে শরীক দলের নেতারা।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের আগেই আসন বণ্টনের বিষয়টি ‘ফয়সালা’ চায় তারা। মূলত গেল দুই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তাদের অনাস্থা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। নির্বাচন এগিয়ে আসায় এ অনাস্থা জোটের ঐক্যে কিছুটা হলেও সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্ট নেতারা। ১৪ দলের সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতেও বিষয়টি তোলার চেষ্টা করেছেন শরিক দলগুলোর কোনো কোনো নেতা।

১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি শরীক নেতাদের জানিয়েছেন, নির্বাচন কাছাকাছি এলে এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

১৪ দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গেও এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন আশ্বাসের পর এখন শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছে শরীক দলগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শরিক সব দলই আগামী নির্বাচনের জন্য তাদের দলীয় প্রার্থীর তালিকাও ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে। বেশিরভাগ দলই নিজস্ব প্রার্থীর তালিকার পাশাপাশি দরকষাকষির জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাও করে রেখেছে। জয়লাভের সম্ভাবনা বিবেচনায় এনেই এসব তালিকা করা হচ্ছে বলে দাবি শরিক দলগুলোর নেতাদের। সব মিলিয়ে ১৪ দলের শরিকরা আগামী নির্বাচনে ৭০ থেকে ৮০টি আসনের নিশ্চয়তা চাইছে আওয়ামী লীগের কাছে। গেল নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে মাত্র ১৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।

শরীক নেতারা জানান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আগামী নির্বাচনে অন্তত ১৫টি আসনে জোটের মনোনয়নের নিশ্চয়তা চাইছে। তবে দলের পক্ষে ৩০টি আসনের দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরি করে রাখা হয়েছে। দলের সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ আসনসহ বর্তমান সংসদের নির্বাচিত দলীয় ছয় এমপির আসন তাদের প্রত্যাশায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

একইভাবে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী-১ আসনসহ ১৫টি আসন চাইছে দলটি। জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পিরোজপুর-২ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের মাদারীপুর-৩ অথবা অন্য যে কোনো আসন এবং তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর চট্টগ্রাম-২ ও মহাসচিব এমএ আউয়ালের লক্ষীপুর-১ আসনসহ ১৫টি আসনের দাবি তুলেছে এ দুই দল। জোটের আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার চট্টগ্রাম ১ আসনসহ অন্তত ছয়টি আসন চায়।

গণতন্ত্রী পার্টি দলের সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলীর সিলেট-১ আসনসহ ১০টির বেশি আসনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা চায়। কমিউনিস্ট কেন্দ্র চাইছে দলের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান ও যুগ্ম আহŸায়ক ডা. অসীত বরণ রায়ের জন্য দুইটি আসন। এছাড়া ন্যাপ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং বাসদসহ শরিক অন্য দলগুলো মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘যথাযথ মূল্যায়ন’ আশা করছে আওয়ামী লীগের কাছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমরা আগেভাবে নির্বাচনী আসনের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার পক্ষে। এতে নির্বাচনের ঠিক আগে ভুল বোঝাবুঝির শঙ্কা থাকবে না। তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোটে এখনও কোনো দলকে নির্দিষ্ট করে কোনো আসনে প্রার্থী করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা আছে।’

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায় বলেন, ‘আমি গোপালগঞ্জ-২ আসনের জন্য কাজ করছি। এর আগেও দু’বার এ আসন থেকে আমি নির্বাচন করেছি। এ আসনে বর্তমান এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম রয়েছেন। নেত্রী ইচ্ছে করলে অন্য যে কোনো স্থানে তাকে (সেলিম) নির্বাচন করাতে পারেন। তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম আমাদের যার যার আসনে কাজ করতে বলেছেন। সে হিসেবে আমি প্রতি সপ্তাহেই বাড়িতে আসি এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করি।’