৬ বছরের আয়করের তথ্য প্রকাশ

২০২০ সালে কর দেননি ট্রাম্প, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও চীনে অ্যাকাউন্ট : রয়টার্স

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছয় বছরের আয়কর রিটার্ন জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। নথিগুলো গোপন রাখতে ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ভেঙে দিয়ে শুক্রবার কংগ্রেস কমিটি নথিগুলো প্রকাশ করে। নথিতে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ট্রাম্প এবং তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া কোনো কর পরিশোধ করেননি। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের।

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্প আয়করের তথ্যগুলো গোপন রাখার চেষ্টা করছিলেন। করের তথ্য প্রকাশ করা নিয়ে কয়েক বছর ধরে রিপাবলিকান এ নেতার সঙ্গে ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতাদের আইনি লড়াই চলছে। গত মাসে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট মামলাটির নিষ্পত্তি করেছে।

শুক্রবার কংগ্রেস কমিটি ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের সংশোধিত আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করেছে। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ নথিগুলো পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদের শেষ বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে ট্রাম্প এবং তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া কোনো ধরনের কেন্দ্রীয় আয়কর পরিশোধ করেননি।
ট্রাম্প যে বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা শুরু করেন অর্থাৎ ২০১৫ সালে তিনি এবং মেলানিয়া আয়কর বাবদ ৬ লাখ ৪১ হাজার ৯৩১ ডলার পরিশোধ করেছেন।২০১৬ ও ২০১৭ সালে তাঁরা ৭৫০ ডলার শোধ করেছেন। ২০১৮ সালে প্রায় ১০ লাখ ডলার, ২০১৯ সালে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৫ ডলার পরিশোধ করেছেন। ২০২০ সালে তাঁদের কর পরিশোধের পরিমাণ শূন্য। এ বছরই ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প বলেছিলেন চীনে থাকা অ্যাকাউন্টটি ২০১৫ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর দাবি ছিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই তিনি চীনের অ্যাকাউন্ট বাদ দিয়েছেন। কিন্তু আয়কর রিটার্নে দেখা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন এবং আয়ারল্যান্ডে তাঁর অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালে শুধু যুক্তরাজ্যে একটি অ্যাকাউন্ট থাকার কথা জানিয়েছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৬ হাজার পৃষ্ঠার নথির মধ্যে ২ হাজার ৭০০ পৃষ্ঠায় ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রীর ব্যক্তিগত আয়করের তথ্য উল্লেখ করা আছে। তিন হাজারের বেশি পৃষ্ঠায় ট্রাম্পের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়করের তথ্য দেওয়া আছে।

২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় অনুসন্ধানী সাংবাদিক, স্বাধীনধারার কর বিশেষজ্ঞ এবং অন্যরা ট্রাম্পের আয়করের তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। ট্রাম্পের সম্পদ, তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর তারা আলোকপাত করতে পারবেন। ট্রাম্প কীভাবে তাঁর করের দায় কমিয়ে নিয়েছিলেন তাও খতিয়ে দেখতে পারবেন তারা।

২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ট্রাম্প। আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।
কয়েক দশকের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি। আয়কর রিটার্নের তথ্য গোপন রাখতে কমিটির বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হাইকোর্ট কমিটির পক্ষে রুল জারি করে।

গত সপ্তাহে কমিটি বলেছে, চার বছরের মধ্য তিন বছরই ট্রাম্পের কর প্রদানের তথ্য নিরীক্ষা না করার মধ্য দিয়ে কর সংগ্রহকারী ইন্টারনাল রেভেন্যু সার্ভিস নিজেই নিজের বিধি ভঙ্গ করেছে।