২১ হাজার লিটার ডিজেল নদীর পানিতে, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ও কার্গোর সংঘর্ষের ঘটনায় ট্যাংকারের সামনের দিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২১ হাজার লিটার ডিজেল নদীতে নির্গত হয়েছে। যে কারণে নদীতে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলেও ইলেক্ট্রোকন্ডাক্টিভিটির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেছে।

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরেফিন বাদল জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, নদীর পাড়ের এবং মধ্যের পানি পরীক্ষার পর অক্সিজেন ও হাইড্রোজের পরিমাণ স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। তবে ইলেক্ট্রোকন্ডাক্টিভিটির মান স্বাভাবিকের সময় ৩৫ থেকে ৪০ থাকে। কিন্তু নদীর পাড়ে এর মান এখন ১০৫ এবং মধ্যে ১০২।

ট্যাংকার থেকে নদীতে ডিজেল নির্গত হওয়ায় নদীর জীববৈচিত্র্যের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কয়েকজন পরিবেশবিদ।

নদীতে বিপুল পরিমাণ ডিজেল পড়ায় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির বিষয়ে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মতিয়ার রহমান জানান, অনেক স্থানজুড়ে নদীতে ডিজেল ছড়িয়ে পড়লে নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ইউট্রিফিকেশন ঘটে। অক্সিজেনের পরিমাপ কমে যাওয়ায় অনেক জলজ মৎস্য প্রজাতি বিভিন্ন হুমকির মুখে পড়ে। অনেক জলজ প্রাণী মারা যায় এমনকি অনেক প্রাণী প্রজনন ক্ষমতাও হারায়।

এই পরিবেশবিদ জানান, জল প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি উৎস। তেল একটি অসমসত্ব মিশ্রণ। তেল পানির সাথে না মিশে পানির উপরিভাগে ভাসমান থাকে ফলে সূর্যের আলো এবং পর্যাপ্ত বাতাস পানির তলদেশে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে পানি তাড়াতাড়ি দূষিত হয় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে।

যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বরিশাল ডিপোর ম্যানেজার মীর মো. ফখরুল আহাসান বলেন, ‘তেলের ট্যাংকারটি চট্টগ্রাম থেকে বরিশালের আমাদের যমুনা ডিপোতে ডিজেল ও পেট্রোল নিয়ে আসছিল। রাস্তায় একটি ফ্লাইঅ্যাশবাহী কার্গোর সঙ্গে সংঘর্ষে ট্যাংকারটির সামনের অংশের একটি ধাপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেখানে এক লাখ ৩২ হাজার লিটার ডিজেল ছিল। শনিবার বিকাল পর্যন্ত ট্যাংকারে থেকে সব তেল আনলোড করার পর জানতে পারি সংঘর্ষের ফলে ২১ হাজার ২৪০ লিটার ডিজেল নদীতে নির্গত হয়েছে।’

দুর্ঘটনা কবলিত হওয়া রওশন এন্টারপ্রাইজের তেলবাহী ট্যাংকার এমটি ফজরের ম্যানেজার আহসান উল কবির বলেন, ‘জাহাজটিতে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ২৩৭ লিটার ডিজেল ছিল, যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে তেল ছিল এক লাখ ৩২ হাজার এবং পেট্রোল ছিল তিন লাখ ১২ হাজার ১০৬ লিটার।’ তাদের জাহাজ এখন নিরাপদ স্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে সংঘর্ষের পরপরই নদীতে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডিজেল স্থানীয় কয়েক’শ মানুষ উত্তোলনের চেষ্টা চালায়। যা স্থানীয় বাজারে তারা বিক্রি করছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ্ মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ‘ওই ঘটনায় অয়েল ট্যাংকার এমটি ফজরের মাস্টার মো. জামশেদুল রহমান ও ফ্লাইঅ্যাশবাহী কার্গো এমভি মা-বাবার দোয়া-২ এর মাস্টার নজরুল ইসলাম পৃথক দুইটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডায়েরি দুইটির তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে দোষী জাহাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ক্ষতিগ্রস্ত উভয় জাহাজ বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহসান হাবিব বলেন, ‘শনিবার সকালে এ সংক্রান্ত চিঠি হাতে পেয়েছি। আজকের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ, ডিজি শিপিং, নৌপুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের নামের তালিকা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে বরিশালগামী তেলবাহী ট্যাংকার এমটি ফজরের সঙ্গে কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া পয়েন্টে ভারত থেকে মংলা হয়ে ঢাকাগামী ফ্লাইঅ্যাশবাহী কার্গো এমভি মা-বাবার দোয়া-২ এর সংঘর্ষ হয়। এতে দুটি নৌ-যানই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সূত্র : ঢাকাটাইমস