২৬ মার্চ : একসাগর রক্তের স্বাধীনতার ৫০ বছর

২৬ মার্চ। একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে আজকের দিনটি সম্পূর্ণ আলাদা। ভিন্ন আমেজ, ভিন্ন অনুভূতির।

একদিকে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, অন্যদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ইতিহাসের এ মাহেন্দ্রক্ষণে দুইয়ে মিলে এক অন্যরকম বাংলাদেশ। জাতীয় জীবনের এ মহিমান্বিত সময়কে কালের রেখায় ধরে রাখতে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে চলছে ১০ দিনব্যাপী উৎসবের মহাযজ্ঞ। এ আনন্দোৎসবের শেষ দিন।

ঢাকাসহ সারা দেশের শহর-বন্দর জুড়ে এখন রঙিন আলোর ঝলকানি। সত্যিই এক অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে জাতির সামনে এসেছে মহান স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিশেষ এ দিন দুটি শুধু বাংলাদেশের মধ্যেই এখন সীমাবদ্ধ নয়, বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রনায়ক বা সরকারপ্রধান বাংলাদেশ সফর করেছেন, করছেন।

সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন শুরু হয়ে থাকছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি, সারা দেশেই।

এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যের ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সম্পন্ন হচ্ছে।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

১৯৭১ থেকে ২০২১

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে নতুন মর্যাদায় আসীন। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সারা বিশ্বেই এখন প্রশংসিত হচ্ছে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপী রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতা। স্বাধীনতালাভের পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। এই সময়ে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। বেসরকারি খাত বিকশিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। প্রবাস থেকে আসছে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স। কৃষি খাতের উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। দেশের তৈরি পোশাকশিল্প, মাছ উৎপাদন ও রপ্তানি, ওষুধশিল্প সারা বিশ্বেই সমাদৃত। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। গড় আয়ু, লিঙ্গসমতা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার, নারী ও শিশু মৃত্যুহার, স্যানিটেশন, খাদ্যপ্রাপ্যতা ইত্যাদি নানা সূচকে বাংলাদেশ শুধু তার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে নয়, অনেক ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে।

২০০৫-০৬ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে যা ২ হাজার ৬৪ ডলার। ওই সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। জিডিপির আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৭৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১ বিলিয়ন ডলারের কম যা বর্তমানে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।

২০০৫-০৬ বছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরের আমাদের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৬ বছর। শিশু মৃত্যুহার কমে প্রতি হাজারে ৮৪ থেকে ২৮ এবং মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ৩৭০ থেকে ১৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এ প্রাপ্তি নিয়েই এবার বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাঙালির জীবনে নিয়ে এসেছে এক ভিন্ন রকম বিশ্ব পরিস্থিতি। সারা বিশ্ব আজ আক্রান্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। হঠাৎ করেই সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে সব কর্মসূচি কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সব কর্মসূচিই হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাঙালি জাতি আজ দৃঢ় শপথে বলীয়ান হবে সব অন্ধকারের শক্তিকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণেই বাংলাদেশ পেয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য।

আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে।