৩৭ টি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে, সমন জারি

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৭ টি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ঝুলছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলা, বিচার প্রক্রিয়া ব্যহত করার ষড়যন্ত্র এবং আরও অনেক। শুক্রবার ফেডারেল কোর্ট এর তরফ থেকে প্রকাশিত একটি নথি থেকে এ ব্যাপারে জানতে পেরেছে সংবাদ মাধ্যম।

জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এই অভিযোগের নথিগুলো এমনই একটি দিনে প্রকাশ করলো যেদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুই জন আইনজীবী তার পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। তবে এরই মধ্যে এইসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করা হয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যখন তিনি হোয়াইট হাউজ ছাড়েন তখন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সরকারি নথি তিনি সাথে করে নিয়ে যান।

আগামী মঙ্গলবার মিয়ামির একটি আদালতে এ বিষয়ে ট্রাম্পকে হাজির হতে বলা হয়েছে। ৭৭তম জন্মদিনের মাত্র ১ দিন আগেই ট্রাম্পকে মুখোমুখি হতে হবে আদালতের।
রাষ্ট্রীয় গোপন নথিসংক্রান্ত এ মামলাসহ দ্বিতীয় কোনো মামলায় অভিযুক্ত হলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আদালতে যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁর ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

রাষ্ট্রীয় গোপন নথিসংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টি ট্রাম্প নিজেও নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের প্রতিষ্ঠিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ তথ্য নিশ্চিত করে ট্রাম্প লিখেছেন, তাঁকে অভিযুক্ত করে মায়ামির একটি ফেডারেল আদালতে হাজির হতে তাঁর নামে সমনও জারি করা হয়েছে। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমনটা (মামলায় অভিযুক্ত) করা যে সম্ভব, আমি কখনো তা ভাবিনি।’ একে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘কালো দিন’ বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক দেশ, যার দ্রুত পতন হচ্ছে। আর এ পতন বেশ গুরুতর। কিন্তু আমরা সবাই মিলে আবারও আমেরিকাকে মহান করে তুলব।’

ট্রাম্পের আইনজীবী জিম ট্রাস্টি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে (ডোনাল্ড ট্রাম্প) একটি সমন পাঠানো হয়েছে। সেখানে অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ আছে।

জিম ট্রাস্টি বলেন, এর মধ্যে ষড়যন্ত্র, মিথ্যা সাক্ষ্য, আদালতের বিচারকাজে বাধা দেওয়াসহ গুপ্তচরবৃত্তি আইনে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের কাছে রাখার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার এ বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এবং এসব অভিযোগের বিষয়ে সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশও করেনি।

এর আগে গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানে সেখান থেকে ১১ হাজার রাষ্ট্রীয় নথি জব্দ করে দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষ। জব্দ হওয়া এসব নথির প্রায় ১০০টি ছিল ‘গোপনীয়’। এর মধ্যে কিছু ‘অতি গোপনীয়’ নথিও ছিল।

পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখার ঘটনায় গত মার্চে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়।

ওই মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সাবেক পর্নো তারকা ড্যানিয়েলকে তাঁর পক্ষ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে হবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি প্রচারণা শুরু করেছেন।

আইনবিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মামলায় অভিযুক্ত হলেও ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে বাধা নেই।