ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতায় ইবির স্কাউটস্ ও বিএনসিসি

বিশেষ পোশাক পরিহিত কয়েকটি দল দাড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে। দাড়িয়ে থাকাটাই শুধু তাদের কাজ নয়, অনবরত সেবা দেওয়াই যেন তাদের পেশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, থানা গেইট, আম বাগান, রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন, অনুষদ ভবন, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ বিজ্ঞান ভবন, মীর মশারররফ হোসেন ভবন, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবন, ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভিক্ত হয়ে তাদের সেবা দিতে দেখা যাচ্ছে। ব্যবহারে বিন্রম, সেবায় অনবরত ও দায়িত্বে মনোযোগী হয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে ভর্তিচ্ছুদের সাথে। কেউ কেউ ভর্তিচ্ছুদের সারিবদ্ধভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করাতে নিয়োজিত। কেউ কেউ পরীক্ষার্থীদের সাথে থাকা মোবাইল, ঘড়ি ও ক্যালকুলেটরসহ যাবতীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস সনাক্তে মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কেউ কেউ ভর্তিচ্ছুদের প্রাথমিক দিক-নির্দেশনা দিতে ব্যস্ত। কেউ কেউ পরীক্ষার্থীদের সাথে থাকা ব্যাগ, বই, ফাইল সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস সংরক্ষণ করে রাখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। এভাবে চলছে তাদের নানা কর্মযজ্ঞ। বলেছিলাম কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও রোভার স্কাউটসে্র সদস্যদের কথা।

গত ২০ মে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ পরীক্ষা চলমান ছিল ৩ জুন পর্যন্ত। এতে মোট ৩ লাখ ৩ হাজার ২৩১টি আবেদন জমা পড়েছিল। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে কেন্দ্র হিসেবে পছন্দ করেছিল ১৩ হাজার ১৮৩ জন পরীক্ষার্থী। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র ‘ডি’ ইউনিটে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২১৭ জন।

এ বিপুল সংখ্যাক শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটস সদস্যদের উপর। তারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় পরীক্ষার প্রথম থেকে শেষ অবদি তীব্র গরমের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকো দুপুর ৩ টা পর্যন্ত সেবায় নিয়োজিত ছিল।

ক্যাম্পাস প্রত্যক্ষ করে দেখা যায়, পরীক্ষার্থীদের যথাসময়ে সারিবদ্ধভাবে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করানো ও হল খুঁজে দেয়া, প্রাথমিক দিক-নির্দেশনা দেয়া, রাস্তার যানজট নিরসনে ট্রাফিকের কাজ করা সহ ইত্যাদি স্বেচ্ছাসেবী কাজে তারা অংশগ্রহণ করে স্বতস্ফুর্তাবে।

এছাড়াও অসুস্থ, আহত, প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের আলাদাভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেও দেখা যায় তাদের। তারা ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য তৈরি তথ্য সেবা কেন্দ্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতাও করেছেন।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে যেমন তাদের নানা সহযোগিতাসুলভ কর্মযজ্ঞ চলে, তেমনি পরীক্ষা শেষ হলেও এসব কাজে ব্যস্ত থাকেন তারা।

প্রতিদিন রোভার স্কাউটসের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ জন সদস্য ও বিএনসিসির প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন সদস্য দিনব্যাপী ৬ ঘন্টা ধরে বিরামহীনভাবে ভর্তিচ্ছুদের কাজে নিয়োজিত থেকেছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউটসে্র ইউনিট কাউন্সিলের সভাপতি মুসা হাসেমী বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ সর্বদা সেবার জন্য প্রস্তুত থাকে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা সর্বাগ্রে। যার ধারাবাহিকতায় ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা- ২০২৩’ এ আমরা তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে সেবা প্রদান করে এসেছি। আমরা চেষ্টা করি যেন একজন পরীক্ষার্থী কোন ধরণের সমস্যা ছাড়াই পরীক্ষার হল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির নৌ-শাখার ক্যাডেট আন্ডার অফিসার আবাদুল মুমিন নাহিদ বলেন, জ্ঞান এবং শৃঙ্খলা এই মূলমন্ত্রকে ধারন করে এগিয়ে চলে বিএনসিসি। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় ক্যাডেটরা নিয়োজিত থাকে‌। এবারও হেল্প ডেস্কে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ব্যাগ, ফোন, ঘড়ি জমা রেখে এবং শৃঙ্খলার সাথে তাদের কাছে উক্ত জিনিস ফিরিয়ে দেয়া, পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র খুঁজে দেয়া, অসুস্থ পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করে তাদের কেন্দ্রে পৌঁছিয়ে দেয়া, এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের চেক করে পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেয়া সহ যাবতীয় কাজ করে থাকে বিএনসিসির ক্যাডেটরা। সর্বোপরি একজন ক্যাডেট জ্ঞান এবং শৃঙ্খলার চর্চা করে সর্বদা নিজেকে অন্যের প্রয়োজনে নিয়োজিত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।