যে ৯ লক্ষণে বুঝবেন আপনার লিভারকে বিষমুক্ত করা জরুরি
মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি লিভার। এটি বিপাকীয় প্রক্রিয়ার নানা উপাদানকে বিষমুক্ত করে, প্রোটিন সংশ্লেষণ করে এবং হজমের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে।
লিভার রক্ত থেকে মৃত কোষ ও আগ্রাসী ব্যাকটেরিয়াদের অপসারণ করে রক্তকে ফিল্টার বা পরিশোধন করে। এবং ক্ষতিকর হরমোনদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এ কারণে মানবদেহের স্বাস্থ্য ভালো থাকার জন্য একটি সক্রিয় লিভার থাকাটা জরুরি। যদি এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে থাকে তাহলে দেহে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে যা থেকে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা আক্রান্ত হতে পারে। জেনে নিন আপনার অজানা এমন ৯টি লক্ষণ যেগুলো দেখে বুঝবেন আপনার লিভারকে বিষমুক্ত করতে হবে।
১. অতিরিক্ত ঘাম
অতিরিক্ত ঘাম ঝরা এবং বাজে দৈহিক দুর্গন্ধ এমন একটি লক্ষণ যা বলে দেয় আপনার লিভারকে বিষমুক্ত করতে হবে। জিহ্বায় সাদাটে হলুদাভ আবরণ পড়লে বা নিঃশ্বাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ বের হলেও বুঝতে হবে আপনার লিভারকে বিষমুক্ত করতে হবে।
২. নাক ডাকা
এটি এমন একটি অস্বস্তিদায়ক সমস্যা যা আপনার ঘুমকে গভীর ও ভালো গুনগত মান সম্পন্ন হতে দেয় না। এটি হতে পারে লিভারের বড় ধরনের কোনো সমস্যা বা কর্মহীনতার লক্ষণ।
যারা নাক ডাকেন তাদের লিভাবে ক্ষতও হয়ে থাকতে পারে।
৩. তলপেটে ফোলাভাব
পেটে খিঁচুনি বা তলপেটে ব্যথা হতে পারে লিভারের সমস্যার প্রাথমিক কোনো লক্ষণ। এমনকি তলপেটে চর্বি জমে ওজনও বেড়ে যেতে পারে। বা ওজন কমানো অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। কারণ লিভার তার কর্মক্ষমতা হারাতে শুরু করার ফলে চর্বি পোড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আর সেই চর্বি পেটে এসে জমা হচ্ছে। খাবার খাওয়ার পর পেট ফেঁপে যাওয়াও লিভারের কর্মক্ষমতা হারানোর আরেকটি লক্ষণ।
৪. ক্লান্তি ও অবসাদ
লিভারের কর্মক্ষমতা হারানোর সবচেয়ে কমন একটি লক্ষণ হলো ক্লান্তি ও অবসাদ। এই ধরনের লোকরা ঘুম থেকে ওঠার পর অনুভব করেন যেন তাদের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে বা তাদের আদৌ কোনো ঘুমই হয়নি। এমনকি এর ফলে কাজের সময় দেহে ব্যথাও হতে পারে।
৫. ত্বকের সমস্যা
আপনার ত্বকের রঙ যদি সম্প্রতি ফ্যাকাশে হলুদাভ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনি লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। ত্বকে র্যাশ ওঠা, চুলকানি-খোস-পাঁচড়া, চোখের নিচে কালি পড়া, ব্রণ, দাগ পড়া, এবং রাঙা মুখ এই সবগুলোই লিভারের কর্মক্ষমতা হারানোর লক্ষণ।
৬. রাসায়নিক সংবেদনশীলতা
লিভারের কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে রাসায়নিকের প্রতি উচ্চ সংবেদনশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। আপনি যদি অ্যালোকোহল পান বা পারফিউম বা অন্য কোনো সুগন্ধির গন্ধ নেওয়ার সময় নিজের হালকা ওজন বোধ করেন তাহলে আপনার দেহকে বিষমুক্ত করা জরুরি।
৭. মেজাজের ওঠা-নামা
মুড সুইং বা মেজাজের ওঠা-নামা লিভারের সমস্যার একটি লক্ষণ। তবে সবসময়ই যে এমনটা হবে তা নয়। লিভারকে বলা হয় ‘রাগের আবাসস্থল’। ফলে লিভারের সমস্যা হলে অবসাদের অনুভুতি, মনোযোগ হারানো বা বারবার মাথা ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৮. হজমের সমস্যা
আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা হার্টে প্রদাহ হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার লিভারকে বিষমুক্ত করতে হবে। লিভারে পিত্তরস নামের একটি দৈহিক তরল উৎপাদিত হয় যা নানা ধরনের হজমপ্রক্রিয়ার জন্য জরুরি। আর লিভারের কর্মক্ষমতা কমে গেলে পাকস্থলি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
৯. হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা
লিভারের একটি বড় কাজ হলো যৌনতা সংশ্লিষ্ট হরমোনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ। ফলে লিভার কর্মক্ষমতা হারালে ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন হরমোনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে যৌন আকাঙ্খা কমে যেতে পারে এবং ঋতুস্রাবগত সমস্যা দেখা দেয়।
এখন কথা হলো কীভাবে লিভার ও দেহকে বিষমুক্ত করবেন? দেহেক টক্সিন বা বিষমুক্তকরন শুরু করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। বিশেষ করে সুগার বা চিনি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। অ্যালকোহল বা মদ পান দেওয়াও বেশ উপকারি বলে প্রমাণিত। আর একেবারেই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাদ্য খেতে হবে। ডাক্তারের সঙ্গেও পরামর্শ করা যেতে পারে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন