পপুলারের ২ বছরের ডায়াগনস্টিক টেস্টের রিপোর্ট ভুল?
‘ধানমন্ডি-২ নম্বর রোডের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ২ বছর আগে (অর্থাৎ ২০১৫ সালে) মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট (ডায়াগনস্টিক টেস্টে রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান) জব্দ করা হয়েছে। এগুলো ব্যবহার করায় টেস্টের যে রিপোর্ট এসেছে সেটা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল অফিসার ড. দেওয়ান মো. মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের একথা বলেন।
এর আগে সোমবার র্যাবের অভিযানে ধানমন্ডি-২ এর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্যবহার, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পরিবর্তন করে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর শাখায় পাঠানো এবং ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এছাড়াও অভিযানে র্যাব-২ এর অর্ধশতাধিক সদস্য, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মেহেদী হাসান বলেন, যে কোনো চিকিৎসার শুরুতে চিকিৎসকরা ডায়াগনস্টিক টেস্ট করতে দেয়। এই টেস্টের রিপোর্ট দেখে তারা ওষুধপত্র দেয়, চিকিৎসা শুরু করে। যদি রিপোর্ট ভুল আসে তাহলে রোগী সঠিক চিকিৎসা পাবে না।
তিনি আরও বলেন, অভিযানে দীর্ঘদিন আগে মেয়াদ শেষ হওয়া রি-এজেন্ট পেয়েছি। এগুলো দিয়ে ডায়াগনস্টিক টেস্ট করা একটি বড় সমস্যা হল এসব রিপোর্টে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কেন রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা? জানতে চাইলে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ম্যানেজার অচিন্ত কুমার নাগ বলেন, পপুলার দীর্ঘসময় ধরে দেশবাসীকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। তবে সমস্যা হচ্ছে যে যাদের দায়িত্ব ছিল এ বিষয়ে আমাদের অবগত করা (ল্যাব ইনচার্জ), তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। যারা আমাদের এসব বিষয়ে অবগত না করে দায়িত্বকে অবজ্ঞা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরেজমিন অভিযানে দেখা যায়, তাদের ব্যবহৃত সিমটেক্স গ্রুপের স্যাম্পল প্লেটের রি-এজেন্টটি ২০১৭ সালের জুন মাসে, সিমেন্স গ্রুপের স্ট্যান্ডার্ড হিউম্যান প্লাজমার মেয়াদ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এবং ক্যাপিলারিস ইমিউনোটাইপিংয়ের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুনে শেষ হয়।
অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, আমাদের কাছে ময়মনসিংহ থেকে একটা অভিযোগ ছিল যে, সেখানকার পপুলারে ঢাকার মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পাঠানো হতো। বাক্সের গায়ের ২০১৬ সালের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বদলে তারা নতুন করে ২০১৮ সাল লিখতো। এখানে অভিযানে এসে আমরা মারাত্মক ত্রুটি খুঁজে পাই। তাদের ল্যাবের মেশিনের ভেতরে, স্টোর রুমে বিপুল পরিমাণে রি-এজেন্ট পাই। এদের কোনটির মেয়াদ ২০১৬ সালে কোনটির ২০১৭ সালে শেষ হয়েছে। রি-এজেন্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হলে টেস্টে সঠিক রিপোর্ট নাও আসতে পারে। ভুল রিপোর্টের কারণে ভুল চিকিৎসা হতে পারে। তারা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করছে। এ কারণে তাদের ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এবার অভিযানে এসে আমরা এমডি কিংবা সিইও কাউকে না পেয়ে সিলগালার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করলে এখানে চিকিৎসাধীন ও টেস্ট করিয়েছেন এমন অনেক রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে পরবর্তীতে এমন অভিযোগ পেলে তাদের আরও বড় শাস্তি দেয়া হবে।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর পপুলার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত সংরক্ষণ ও ২৩ ধরনের অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির অপরাধে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল র্যাব। সে সময় তাদের ব্লাড ব্যাংক থেকে তিনটি রক্তভরা ব্যাগ পাওয়া যায় যেগুলোর মেয়াদ ৪-৫ দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন