আদি হতে এ পর্যন্ত সুবর্ন অদ্বিতীয় (২য় পর্ব)

রুবাইত হাসান : ২০১৩ সাল । এক বছর বয়সী সুবর্ণ আইজ্যাক বারী নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের বেডে জ্বরে কাতরাচ্ছিল। তার বাবা রাশীদুল বারী বললেন,‘আই লাভ ইউ মোর দ্যান এনিথিং ইন দ্য ইউনিভার্স’। সুবর্ণ বলল, ‘ইউনিভার্স অর মাল্টিভার্স?’ কলেজ শিক্ষক রাশীদুল বারী চমকে গেলেন । কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না এই সুবর্ণ ৩ বছর বয়সে অংক,পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়নে দক্ষতা দেখিয়ে সারা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিবে । সেই সুবর্ণ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুবর্ণর মেধা বিস্ময় সৃষ্টি করেছে সর্বত্র। যে এখনও স্কুলেই যায়নি, সে কীভাবে জ্যামিতি, বীজগণিতসহ রসায়নের জটিল বিষয়ের সহজ সমাধান দিচ্ছে। অক্ষর জ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন করা ছাড়াই কীভাবে সে ইংরেজী বই অবলীলায় পাঠ করছে?

কৌতুহলের পাশাপাশি জিজ্ঞাসার অন্ত নেই বিস্ময় শিশু সুবর্ণকে ঘিরে।আরো কয়েকটি চমকে দেওয়া তথ্য আছে। দুই বছর বয়সে সে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজে ইন্টারভিউ দিয়েছে।সাড়ে তিন বছর বয়সে খ্যাতনামা একটি কলেজের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ পেয়েছে । তার মা’র সাথে ছোট্ট একটা গল্পও শুনিয়ে দিই। যথারীতি ওর মা ওকে অংক শেখাচ্ছিলেন। হঠাৎ সুবর্ণ বলল, ‘ইফ ওয়ান প্লাস ওয়ান ইক্যুয়াল্টো টু, দ্যান ২ প্লাস ২=৪ এবং এন এন=২ এন, তাই না?’ রাশীদুল বারী তখন পাশের রুমে তার ছাত্রদের পেপার দেখছিলেন। এমন বিস্ময়কর কথা শুনে তিনি দৌড়ে সুবর্ণর কাছে চলে গেলেন। তার চোখে আনন্দের জল। স্ত্রী জানতে চাইলেন, কাঁদছ কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বারি বললেন, ‘জানো আমাদের সমনে কে বসে আছে? কার্ল ফাইডরিচ গোস (জার্মানের অঙ্কশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ)।

দেড় বছর বয়সী পুত্রের অংক শাস্ত্র প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে রাশীদুল বারী তাকে এডভান্সড ম্যাথ এন্ড সায়েন্স এর লেসন দেয়া শুরু করলেন । আর এভাবেই মাত্র ২ বছর বয়সে সে রসায়নের পিরিয়ডিক টেবিল মুখস্ত করে ফেলল । এ অবিশ্বাস্য কথাটি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘বারী সাইন্স ল্যাব’ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিস্ময়কর প্রতিভার কথা। এমনি অবস্থায় মেডগার এভার্স কলেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড পোজম্যান সুবর্ণের মেধা যাচাই করতে চান। সুবর্ণ পর্যায় সারণীর সবগুলো এলিমেন্ট বলে পোজম্যানকে অবাক করে দেয় । সেদিন তিনি এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, ১ বছর পর আবার তাকে ডেকে পাঠালেন পোজম্যান। এরপরই ডাক পড়ে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগ থেকে যার কথা আবারো একটি গল্পে শেষ করতে চাই। বাবা বারী তাকে নিয়ে যান ওয়াশিংটন ডিসিতে ভয়েস অব আমেরিকা স্টুডিওতে। সেখানে সাবরিনা চোধুরী ডোনা তার ইন্টারভিউ নেন এবং বছরের সেরা কনিষ্ঠ ইন্টারভিউ হিসাবে তারা এটা বাছাই করে ইংরেজী নববর্ষে পুনঃপ্রচার করেছে । কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘঠনাটি ঘঠে যখন আড়াই বছরের এই শিশুটি পর্যায় সারণীর সব এলিমেন্টগুলোর নাম বলে যাচ্ছিল অবলীলায়। বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দারসহ সকল সাংবাদিক অবাক বিস্ময়ে তার এই প্রতিভা অবলোকন করেন। তারাও অবাক আর নির্বাক, বোবা হয়ে তাকিয়ে ছিলেন সুবর্ন’র দিকে। (চলবে….)

লেখক : সংগঠক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব