এখন কেন গণফোরামে যোগ দেওয়ার হিড়িক?
বাংলাদেশে সম্প্রতি অন্তত তিনজন সুপরিচিতি রাজনৈতিক নেতা এবং প্রায় দশজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দল গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের দল বদলের ঘটনা দেশটিতে নতুন কিছু নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব দল পরিবর্তনের ঘটনা দেখা যায় ছোট দল থেকে বড় দলের রাজনীতিবিদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে। অথবা ক্ষমতা কিম্বা মন্ত্রিত্বের আকর্ষণে।-বিবিসি বাংলা
কিন্তু গণফোরাম একটি ছোট দল হওয়ার পরেও এখন কেন এই দলে যোগদানের হিড়িক পড়েছে?
সর্বশেষ গণফোরামে যোগ দিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আবু সাইয়িদ।
তিনি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পাবনার বেড়া এবং সাঁথিয়া এলাকায় নির্বাচন করছেন।
১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তিনি আওয়ামী লীগে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন এবং এরপর দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন।
তার আগে আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন সাবেক নেতা গণফোরামে যোগ দিয়েছেন।
গণফোরামের নেতারা বলছেন, তাদের দলের দীর্ঘ ২৫ বছরের রাজনীতিতে এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের দলে অনেকে ভিড় করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, এখন দলবদলের পিছনে নির্বাচনে আসন পাওয়া ছাড়া আদর্শ বা অন্য কোন বিষয় নেই।
“তারা যাচ্ছেন সিটের জন্য। ঐ যে আপনার আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি এবং ড: কামাল হোসেনের কারণে এখন গণফোরামের নামটা প্রমিনেন্টলী এসে গেছে। এই গণফোরামে যাওয়াটা শুধুমাত্র সিট পাওয়ার জন্য। আর কোন কারণ তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না।”
“সরাসরি বিএনপিতে যেতে একটু লজ্জা করে। আপনি এতদিন বিএনপির সবকিছু খারাপ বলে, হঠাৎ বিএনপিতে গেলে আপনার আশে পাশের লোকেরাও তো আপনার সমালোচনা করবে।”
“এতদিন যারা আওয়ামী লীগের ছাতা নিয়ে ঘুরেছে, তাদের জন্য হঠাৎ করে বিএনপিতে যাওয়া তো কঠিন ব্যাপার। সে কারণে তারা গণফোরামে ভিড় করছে। গণফোরামের নেতারা তো এক সময় আওয়ামী লীগে ছিলই।”
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বা দলটির সাবেক যেসব নেতা গণফোরামে গেছেন, তারা রাজনীতিতে একটা নিরাপদ অবস্থান বজায় রাখতে সরাসরি বিএনপিতে যোগ না দিয়ে গণফোরামকে নির্বাচনী ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের আরও অনেকে মনে করছেন, গণফোরাম ছোট দল হলেও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ড: কামাল হোসেনের গ্রহণযোগ্যতা থাকায় বিএনপি তাদের দু’জন শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে তাঁর নেতৃত্বে জোট করেছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক অনেক নেতা ড: হোসেনের গণফোরামে যোগ দিয়ে নির্বাচনে বিএনপির ভোট ব্যাংক ব্যবহারের সুযোগ নিচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা এর কারণ হিসেবে বলেছেন, ড: কামাল হোসেন ৯০ দশকের শুরুতে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসেই আলাদা দল গঠন করেছিলেন। ফলে আওয়ামী লীগের সাবেক যারা গণফোরামে গেছেন, তাদের জন্য সেটা সহজ এবং রাজনীতিতে অনেকটা নিরাপদ অবস্থান হয়েছে।
গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীও মনে করেন, আসনের জন্যই তাদের দলে এখন অনেকে যোগ দিতে পারেন।
“অনেকে আছেন, যারা সকালে একটা অফিসে যায়, মনোনয়ন না পেলে বিকেলে আরেকটা অফিসে যায়। এ রকম আমরা আগের নির্বাচনগুলোতেও দেখেছি। সুস্থ ধারার রাজনীতি চালু করার যে প্রচেষ্টা আমরা করছি, সেটা তো একটা নির্বাচন দিয়ে করা সম্ভব নয়।”
কিন্তু গণফোরামও তো অন্য দল থেকে এলেই তাকে নিয়ে প্রার্থী করছে, এই প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “এখন যারা আগ্রহ প্রকাশ করছে, তাদের আমরা নিচ্ছি। কিন্তু সকলেই মনোনয়ন পাবেন, তেমনটা নয়।”
একইসাথে গণফোরামের এই নেতা বলছেন, তাদের নেতার নেতৃত্বের কারণেও অনেকে আসছেন।
কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া গণফোরামে যোগ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের আরো একজন সাবেক নেতা ও ডাকসু ভিপি সুলতান মো: মনসুর আহমেদ গণফোরামে গেছেন। দশজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তাকেও গণফোরামে যোগ দিতে দেখা গেছে।
তবে শাহ এম এস কিবরিয়াকে হত্যার ঘটনা ঘটেছিলো বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে। এই হত্যা মামলাতে বিএনপির কয়েকজন নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে রেজা কিবরিয়া গণফোরামে যোগ দিয়ে জোট থেকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়কে বড় চমক হিসেবে দেখেছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
তবে রেজা কিবরিয়া বলছিলেন, তিনি আদর্শের কারণেই গণফোরামে গেছেন।
আবু সাইয়িদ এর সাথে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন