মওদুদকে দর্শকের প্রশ্ন, খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন?
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ ও হট্টগোল করতে দেখা যায়।
আলোচনার সভার শেষের দিকে দর্শক সারিতে বসা বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি ও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে কথা শুনতে চান। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
মওদুদ আহমদের কথা চলাকালে দর্শক সারি থেকে এক নেতা বলে ওঠেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেন, কবে এবং কীভাবে মুক্তি পাবেন? আজকে হল রুম খালি কেন?
প্রথম অবস্থায় মওদুদ আহমদ সেই কথা শুনতে পাননি। তিনি জানতে চাইলে দর্শক সারি থেকে আবারও একই প্রশ্ন করা হয়। অনেকেই এই নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘হবে, একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
পরিস্থিতি শান্ত হলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। একমাত্র পথ হচ্ছে, আন্দোলন। সেই জন্যই আমাদের সুপরিকল্পিত আন্দোলন করতে হবে। সেভাবেই আমাদের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এখন আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি।’
ভাষা আন্দোলনে নিজের অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ করে মওদুদ আহমদ বলেন, একুশের চেতনা ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। তারা কখনোই চায় না দেশে কোনো বিরোধীদল থাকুক। দেশে একটি নির্বাচন হয়েছে, এটা কেউ বিশ্বাস করে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যত করেই বলুক না কেন তারা, ভালো নির্বাচন হয়েছে। এটা সত্য নয়। তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতা পরিচালনা করছে।
এরপর সভাপতির বক্তব্য নিয়ে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শুরু করলে একপর্যায়ে দর্শক সারি থেকে আওয়াজ আসে, ‘বিএনপির কমিটি ভেঙে দেন। আজকে হল খালি কেন?’
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কর্মসূচি আসবে। ধৈর্য ধরতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘দাঁড়ান, হলে বসে চিৎকার করলে হবে না।’ পরে পরিস্থিতি সামলে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেন ভাবছেন, ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা ব্যর্থ হননি। আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে ১০ বছর ধরে নির্যাতন চালাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একুশের চেতনা ধারণ করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবই।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা নিজেকে দুর্বল ভাবেন কেন? মনোবল হারাবেন না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনো বলেননি মনোবল হারাতে। তিনি বলেছেন, সাহসের সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে। আমাদের অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সেই জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।’
কারাগারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। অত্যন্ত অসুস্থ। মওদুদ সাহেব বলেছেন। আমিও আজকে গিয়েছিলাম, জেলগেট থেকে ফিরে এসেছি। দেখা করতে পারিনি।’ এ সময় তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি এত বড় একটি রাজনৈতিক দল। সারা দেশে সংগঠন আছে, কর্মী-সমর্থক আছে তবু কেন আমাদের নেত্রীর মুক্তি হচ্ছে না?
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামি ও আন্দোলন করতে পারি তাহলে অবশ্যই খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।
একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি এই আলোচনার সভার আয়োজন করে। মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন