খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে চিকিৎসকরা যা বলছেন
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পায়ের জয়েন্টে এবং হাতে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে সোমবার দুপুরে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার থেকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কারাগারে খালেদা জিয়ার ব্যবহারের সব জিনিসপত্রও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়ার পর ব্যক্তিগত কর্মচারীর সাহায্যে গাড়ি থেকে নামেন খালেদা জিয়া। এরপর তাকে হুইলচেয়ারে করে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. হক বলেন, ”উনি (খালেদা জিয়া) হাঁটতে পারছেন না, ডায়াবেটিস একটু বেশি, ক্ষুধামন্দা রয়েছে, মানে খাবারের রুচি কম। এসব সমস্যা নিয়ে তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।”
তিনি জানান, হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে দেখে প্রেসক্রিপশন দিয়েছে যে – কী কী ওষুধ খেতে হবে।
”উনি এখানে থাকবেন। প্রতিদিন আমরা ওনার ফলোআপ করবো, ওষুধ খাওয়ার ওনার স্বাস্থ্যের উন্নতি কি হয়, সেটা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো,” বলছেন মি. হক।
খালেদা জিয়াকে যে কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল।
এই বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকার বলেছেন, ”আমরা গত কয়েকদিনে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, সেটার ভিত্তিতেই তাকে আজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে।”
“এসব ওষুধ খাওয়ার পর ফলোআপ করা হবে। দুই-তিনদিন পরে আবার আমরা তাকে দেখবো।”
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা কতটা গুরুতর?
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাহবুবুল হক বলছেন, ”ওনার (খালেদা জিয়া) অবস্থা খুব খারাপ নয়। তিনি বোর্ডের সামনে বসে কথা বলেছেন, বোর্ডকে নিজেই স্বাস্থ্যের সমস্যার কথা জানিয়েছেন এবং ওষুধপত্র কিভাবে খাবেন বুঝে নিয়েছেন।”
“মূলত বয়সের জন্য কিছু সমস্যা তার দেখা দিয়েছে।”
কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে তাকে?
কতদিন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে থাকতে হতে পারে, সে সম্পর্কে কোন ধারণা দিতে পারেননি কর্মকর্তারা।
পরিচালক মি. হক বলছেন, ”সেটা এখনি বলা যাবে না। তার স্বাস্থ্যের উন্নতির বিষয়টি দেখে আমরা সেটা বুঝতে পারবো।”
‘বিশেষায়িত হাসপাতালের ব্যাপারে কিছু জানান নি খালেদা জিয়া’
খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
“তার রক্ত পরীক্ষার এক মাস পর তাকে হাসপাতালে আনা হলো,” অভিযোগ তুলে তিনি বিষয়টিকে ‘চিকিৎসায় অবহেলা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
“আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি যেন তার চিকিৎসা কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে হয়। তারপরেও তাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো।”
“আমরা এখনো দাবি জানাই তার চিকিৎসা যেন কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে করা হয়।”
তবে খালেদা জিয়া বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হলেও, বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাপারে খালেদা জিয়া বোর্ডকে নিজে কিছু জানাননি বলে বলছেন হাসপাতালের পরিচালক।
এর আগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
কারাগারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ‘সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না’ – বিএনপির পক্ষ থেকে অনেকদিন আগে থেকেই এরকম অভিযোগ করা হচ্ছিল।
এমনকি খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার ‘ইচ্ছাকৃতভাবে গড়িমসি করছে’ – এমন অভিযোগও তোলা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে সবসময়ই বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী কারাগারে ‘সর্বোচ্চ সুবিধা’ দেওয়া হচ্ছে তাকে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর সাজা হলেও, সেটি বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি নামের আরেকটি মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন