বন্যা পরিস্থিতি : প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা
টানা নয় দিনের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ৷ প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৫ জেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন৷
জীবনরক্ষাকারী ওষুধের তীব্র সংকটে এসব পানিবন্দি মানুষেরা৷
নিম্নবিত্ত মানুষদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত পানিতে ডুবে এবং সাপের কামড়ে নয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, পুরাতন সুরমা, সোমেশ্বরী, কংস, ধরলা, তিস্তা, ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও সাঙ্গু -এই ১৪টি নদীর পানি সোমবার ২৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ সুরমা কুশিয়ারা ছাড়া দেশের সকল নদ-নদীর পানি বাড়ছে৷’
তিনি জানান, ‘‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে৷ তবে মধ্যাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হতে পারে৷ আবার অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে যাবে৷ মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও রাজবাড়ি জেলার অনেক এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে৷”
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামি ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়তে পারে৷ মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ধলেশশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে৷ সেইসঙ্গে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে৷ তবে, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও, মাত্রাটা কম থাকবে৷
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিস্তৃত এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে৷ এছাড়া দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে৷
দুর্গত এলাকার অনেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু বাঁধের ওপরে খোলা আকাশের নিচে৷ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কিছু কিছু এলাকায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছালেও বেশিরভাগ দুর্গত এলাকাতেই তা পৌঁছায়নি৷
এদিকে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে৷ সোমবারও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, দেশের কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টিপাতের মাত্রা খানিক কমে এলেও দুই-তিন দিনের মধ্যেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে৷ ফলে, ঢল ও বৃষ্টির কারণে বন্যার মাত্রাও বাড়তে পারে৷ ফলে বাড়বে মানুষের ভোগান্তি৷
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক ম. ইনামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার কিছু পরিকল্পনা আগে থেকেই নিয়ে রাখে৷ এবারও রেখেছে৷ এ কারণে তো নেপালে খাবার না পাওয়ার কারণে অনেক বন্যার্ত মানুষ মারা গেছেন৷ কিন্তু বাংলাদেশে একজনও মারা যাননি৷ কিন্তু বন্যার পানি অনেক সময় হিসাবের বাইরে নতুন এলাকা প্লাবিত করে৷ ফলে কিছু মানুষের কষ্ট হয়৷”
তবে ত্রাণ প্রসঙ্গে কিছুটা ক্ষোভ ফুটে ওঠে ম. ইনামুল হকের কণ্ঠে৷ তিনি বলেন, ‘‘ত্রাণ নিয়ে তো অভিযোগ নতুন নয়৷ আগেও ত্রাণ চুরির ঘটনা ঘটেছে৷ এখনো ঘটছে৷ ফলে এগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে দুর্গত এলাকার মানুষের কষ্ট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব৷”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারি পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেছেন, বর্তমানে দেশের ১৬ জেলা বন্যায় আক্রান্ত৷ গত ১০ জুলাই থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর এই ১৬ জেলার রোগব্যাধি সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে৷
এই জেলাগুলোর ৫৩টি উপজেলার ২০৯টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত৷ এসব এলাকায় মোট আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ২৬৯টি৷
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন