বিএম নজরুল

সাতক্ষীরার কলারোয়ার এক অভিভাবক-মহানায়কের প্রস্থান

সাতক্ষীরার কলারোয়ার এক অভিভাবক, মহানায়কের প্রস্থান হলো। শায়িত হলেন চিরনিদ্রায়। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। হাজারো মানুষ দিলেন শেষ বিদায়।
আলহাজ বিএম নজরুল ইসলাম। ‘নজরুল সাহেব’ নামেই যিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে তিনি ছিলেন দলমতনির্বিশেষে সর্বজনবিদিত ব্যক্তিত্ব। ছিলেন এ অঞ্চলের স্বচ্ছ ও সুস্থ ধারার রাজনীতির পুরোধা। আপমর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার এই সজ্জন মানুষটি বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সকালে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বিএম নজরুল ইসলাম ছিলেন সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সাবেক আহবায়ক ও বর্তমান সহ.সভাপতি এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
একই সাথে বহু সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিলো তার হাতের ছোঁয়া ও সম্পৃক্ততা।

শুক্রবার সকাল ৮টায় কলারোয়া পাইলট হাইস্কুল ফুটবল মাঠে জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয় বিএম নজরুল ইসলামের লাশ। সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

পরে সেখান জানাজাপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন প্রয়াতের একমাত্র পুত্র বিএম রবিউল ইসলাম রিপন, শ্যালক আলহাজ আব্দুর রহিম, সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক এমপি একেএম ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম, কলারোয়া থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ এমএ ফারুক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন, কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, পৌর মেয়র প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তাফা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন মৃধা, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার।
আলোচনাপর্ব সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আলম মল্লিক।

স্মরণকালের বৃহৎ এই জানাজায় নানান বয়সী ও পেশার অসংখ্য মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা নামাজে ইমামতি করেন কলারোয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলহাজ মাওলানা আব্দুল বারী।

এর আগে প্রয়াতের খাটিয়ায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দ।

পরে কলারোয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে প্রয়াতের বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হয়।

এদিন জুম্মা নামাজের পর বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদে মরহুমের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সদ্যপ্রয়াত বিএম নজরুল ইসলাম ছিলেন ওই মসজিদের সভাপতি।

এদিকে, বিএম নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, ধর্মীয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্যরা।
তারা বিএম নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ নয়, কলারোয়াবাসী একজন অভিভাবক হারালো। যেটি সকলস্তরের জনগণের জন্য বেদনা দায়ক। মহান আল্লাহ্ পাক তাকে বেহেশত দান করুন।’

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) পবিত্র মাহে রমজানের ৫ম রোজায় বেলা ১২টার দিকে রাজধানী ঢাকাস্থ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলহাজ বিএম নজরুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না..রাজিউন)।
তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র, ৪ কন্যা ও নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুনগ্রাী রেখে গেছেন।
তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিএম নজরুল ইসলাম হার্টের বাইপাস সার্জারিরত অবস্থায় হঠাৎ কিডনি ও হার্টের সমস্যা অনুভব করায় ডাক্তার শফিকুল ইসলামের পরামর্শে দ্রুততার সাথে বিমানযোগে গত বুধবার রাতে ঢাকাস্থ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

বিএম নজরুল ইসলাম নিজে একটি দলে সম্পৃক্ত থাকলেও দলের ঊর্দ্ধে থেকে তিনি ছিলেন দলমতনির্বিশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।
তার মৃত্যুতে কলারোয়ার আস্থাভাজন আরো এক অভিভাবকের অবসান হলো।