নারী শ্রমিকদের শ্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশের পোশাক শিল্প
দেশের অর্থনীতি চাকা চাঙা রাখতে এক সময়ে কৃষি অর্থনীতির ওপর রাষ্ট্রের নির্ভর করতে হয়ে ছিলো। তবে গেল কয়েক যুগের মধ্যে নারী শ্রমিকদের অদম্য মেধাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে দেশের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রাণকেন্দ্র তৈরি পোশাক শিল্প ধামাধাম এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর। দেশে ব্যাপক হারে কৃষি পণ্য উৎপাদন-বিপণন, আমদানি ও রপ্তানির মধ্য দিয়েই কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির যাত্রা শুরু হয়। এর পরে দেশের আদর্শবান ও দেশ প্রেমিক কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমের বদলতে ধীরে-ধীরে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই কৃষি অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে যায়। এর কয়েক বছর পর দেশে আরেক নতুন এক সম্ভাবনাময় অর্থনীতি অর্জনের সন্ধ্যান পায় দেশ। আর সেই অপার সম্ভাবনাময় শিল্প রেডিমেন্টেস গার্মেন্টস। অর্থাৎ তৈরি পোশাক শিল্প।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এর তথ্য মতে,বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পোশাক খাতের অবদান ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এখানে কাজ করে। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশই আসে পোশাক খাত থেকে। আর এ সেক্টরে প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করছে শতকরা ৮৫ % নারী শ্রমিকরা।
সরেজমিনে, দেশের বৃহৎ তৈরি পোশাক শিল্পাঞ্চল গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস, টঙ্গী,কোনাবাড়ী, পল্লী বিদ্যুৎ, মাওনা ও জৈনাবাজার এলাকা। অপর দিকে আশুলিয়া ও সাভার শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, জিরানী,নরসিংপুর,রপ্তানি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত হাজার-হাজার নারী শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে একটা নিরব কষ্ট ও আর্তনাদ চলছে। বর্তমান বাজারে খাদ্য সামগ্রী ও ওষুধের দাম যে পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে করে সংসারের ব্যয় মিটানো খুব কষ্ট হচ্ছে। যদি সরকার নতুন মজুরি বৃদ্ধি দিয়েছে। তবে বাজার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হচ্ছে।
যাদের কারখানায় পোশাক শ্রমিকরা মাথার গাম পায়ে ফেলে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সেই সব কারখানার মালিকদের কাছে কোনো দয়া বা করুণার পাত্র হয়ে না, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বুঝে শ্রমিকদের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের রেশনিং সুবিধা প্রদানে মালিকদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এখন সময়ে দাবি বলে জানিয়েছেন এসব শিল্প কারখানায় কর্মরত হাজার-হাজার নারী পোশাক শ্রমিকরা।
জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এ ছাড়া ডাল ১০০, আটা ১১৩, খোলা সয়াবিন তেল ১১০ ও ডিমের দাম ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। এর বাইরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ। দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পোশাকশ্রমিকের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এমতাবস্থায় তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য রেশনিং সুবিধা চালু করা অত্যন্ত সময় উপযোগী এবং জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পোশক শিল্পে জড়িত শুধু নারী শ্রমিকরাই না এর পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকরাও এক কাতারে বলছেন। আর মাত্র কয়েকদিন পরই রমজান মাস শুরু হবে। তবে এই সময়টাতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সামান্য ভর্তুকি দিয়ে নিত্যপণ্যের রেশনিং সুবিধা প্রদান করা হলে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রমজান কাটাতে পারতেন।
গাজীপুরের অন্যতম শিল্প গ্রুপ পলমল গ্রুপে কাজ করেন পোশাক শ্রমিক বিউটি আক্তার। তিনি এক সাক্ষাৎকারে সোনালী নিউজকে জানান, তিনি প্রায় দীর্ঘ ৫ বছর যাবত কোয়ালিটি পদে কাজ করছেন।এই পাঁচ বছর যে ভাবে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সংসার পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। এখন মোটা চাল আর পাতলা ডাল খেয়ে চলতেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, কারখানা মালিকরা রেশন দিলে আমগরে অনেক উপকার হইতো।
গাজীপুরের আরেক শিল্প গ্রুপ ডিবিএল। এই গ্রুপে চাকরি করেন সাবিনা আক্তার আক্তার বলেন, তিনি একজন সুইং অপারেটর সোনালী নিউজকে জানান, গেল পাঁচ বছরে তার বেতন বেড়েছে ৭০০ টাকা। অথচ সংসারে গেল পাঁচ বছরে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তার সংসারে খরচ বেড়েছে ৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এখন যে ভাবে পরিবার পরিচালনা করছেন এ ভাবে চলতে থাকলে এক টাকাও জমা রাখতে পারবেন না। গার্মেন্টস মালিকরা একটু ভর্তুকি দিয়ে রেশন দিলে আমরা অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাইতাম।
এদিকে পোশাক শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের (এমএফও) যৌথ গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে, ধারাবাহিক ভাবে পোশাক শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নির্ধারিত কাজের বাইরেও অতিরিক্ত কাজ (ওভারটাইম) করতে হচ্ছে। এতে তাদের আয় কিছুটা বাড়ছে। তারপরও মাসের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
আলাপচারিতায় এক পর্যায়ে সোনালীনিউজ-এর সঙ্গে কথা হয় বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ ফারুক হাসানের সাথে। তিনি জানান,এবার পোশাক শ্রমিকরা নতুন বেতন পেয়েছেন। তারা ওভারটাইম নিয়ে মোটামুটি একটা বেতন তুলছে। আশাকরি রমজানে তাদের তেমন অসুবিধা হবে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার কঠোর ভাবে বাজার মনিটরিং করছে।
তিনি আরও বলেন,কিছু কারখানার মালিকরা রমজানে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করেন। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি সব কারখানার মালিকরা যদি রমজান উপলক্ষে বিশেষ সুবিধা প্রদান করেন তাহলে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ভাল হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন