অযাচিত তর্ক-বিতর্ক বাদ দেই, সামনে অনেক কাজ : তারেক রহমান


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্কে না জড়িয়ে আসুন আমরা দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে যাই। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজে খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আমাদের যেকোনো মূল্যে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, বিশেষ করে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সবাইকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করতে হবে, যে কোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র যাতে ফিরে আসে। যে কোনো মূল্যে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যদি দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে আমরা দেশকে যেই সর্বনাশের; যেই খাদের কিনারে বাংলাদেশ চলে গেছে সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, আজ আমরা দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা করছি। দলকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই যে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের হাজারো নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, আমাদের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে, বিভিন্ন গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছে, এখনো প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। কেন? সেই একটি কারণ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখন বলতে পারেন দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে কি হবে? দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করলে দলে ভিত্তি যেমন শক্তিশালী হবে। দল পরিচালনার দায়িত্ব যখন ধীরে ধীরে সঠিক ব্যক্তিদের কাছে ফিরে যাবে। যারা দলকে নেতৃত্ব দিলে দল সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারবে। ঠিক একইভাবে দেশের ভেতরে যদি আমরা গণতান্ত্রিক চর্চা করি, ভোটের চর্চা করি। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করি সেই প্রতিনিধিদের যারা জনগণের কথা বলবে, যারা জনগণের সমস্যার কথা বলবে। যারা দেশের সমস্যার কথা বলবে।
তিনি আরও বলেন, অতীতে কি হয়েছে আমরা দেখেছি, কীভাবে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। কীভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে আমরা শুনেছি। আমরা দেখেছি কিছুদিন আগেও কীভাবে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। আমাদের বহু সহকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট মাসে আমরা দেখেছি কীভাবে নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে। কীভাবে চৌদ্দশ মানুষ শহীদ হয়েছেন আজকের এ মুক্ত পরিবেশকে উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের থেমে থাকলে চলবে না, সামনে এগোতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, রাজনীতির একটি অংশ-বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে, তর্ক হবে, বিতর্ক হবে। তবে আমাদের খেয়াল করতে হবে তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে দেশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব যাতে না হয়, যাতে করে সেই স্বৈরাচার হোক অথবা এমন হোক যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না, এমন কেউ সুযোগ পেয়ে যাক। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে আরও একটি বিষয়ে আমরা অযাচিত তর্ক-বিতর্ক করে জনগণ এবং দেশের স্বার্থ রক্ষা থেকে যাতে দূরে সরে না যাই। আমাদের সামনে অনেক অনেক কাজ আছে।
দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা আনতে হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আমাদের এ শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, কৃষি ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। নজর দিতে হবে দ্রব্য মূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, এই যে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন যুদ্ধ করছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বা বাজার সিন্ডিকেট যেটাই বলি এটার দিকে নজর দিতে হবে। এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কাজগুলো যদি আমরা না করি দেশকে রক্ষা করা যাবে না। এ কাজগুলো করতে হলে দেশের মধ্যে আমাদের স্থিতিশীলতা আনতে হবে। কাজগুলো আমাদের ঠান্ডা মাথায় বসে আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। সঠিক ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে হবে যারা দেশের মানুষের জন্য কাজগুলো করবে।
দেশের সবকিছু ধ্বংস করে স্বৈরাচার পালিয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বলুন, শিক্ষা বলুন, কৃষি বলুন আর শিল্প বলুন যাই বলুন না কেনে আমাদের এই স্বৈরাচার যে জায়গায় রেখে গিয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একটা কথা বলেছিলেন, এ স্বৈরাচার সবকিছু ধ্বংস করে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে। তার বহু বছর আগের বলা সেই কথা আজ পরতে পরতে সত্য হয়েছে। স্বৈরাচার লুটপাট করে পালিয়ে গেছে এদেশকে ধ্বংস করে।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীন, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, যশোর বিএনপি নেতা সাবেরুল ইসলাম সাবু, কাজী আলাউদ্দিন, আমিরুল ইসলাম কাগজী।
আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু, সদর থানা বিএনপির সভাপতি কে এম হুমায়ুন কবীর, সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মনি, খালিশপুর থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবু, দৌলতপুর থানা বিএনপির সভাপতি মুর্শিদ কামাল, খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা।
প্রথম অধিবেশন শেষে বিকেল ৪টার দিকে জেলা স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে কাউন্সিলর অধিবেশন শুরু হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক তিনটি পদে প্রার্থী হয়েছেন ১২ জন। মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে বর্তমান আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির এবং দৌলতপুর থানা বিএনপির সদস্য সাহাজী কামাল টিপু প্রার্থী হয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর।
সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন শের আলম, মাসুদ পারভেজ, মাহবুব হাসান, হাসানুর রশিদ চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম ও শেখ সাদী।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন