মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবার অবস্থান নিয়ে মুখ খুললেন মির্জা ফখরুল

মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের প্রয়াত বাবা মির্জা রুহুল আমিনের অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তার বাবাকে নিয়ে ‘গুজব ও মিথ্যাচার’ করা হচ্ছে।

সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল আশা করেন, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ ছেলেমেয়েরা করবে না।

তিনি বলেন, ‘আমি গত দু দিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে আছি। কিছু কথা বলা এখন খুব জরুরি, আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ও তরুণ প্রজন্মের জন্য। জীবনের এই প্রান্তে এসে যখন দেখি, সমাজে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে মিথ্যার চাষ করছে, তখন বলা আরো জরুরি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১-এর মার্চের ২৭ তারিখে আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই বোন এবং মাকে নিয়ে। তারপর এপ্রিলে চলে যান ভারতের ইসলামপুরে। রিফিউজি ক্যাম্পে ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়! আমার বাবা ঠাকুরগাঁও ফিরে আসেন তখনই। যখন ফিরে আসেন, দেখেন সব লুট হয়ে গেছে।’

অর্থাভাবে তার মা তার গয়না বিক্রি করে দেন- উল্লেখ করে স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি যোগ দিই অর্থনীতি শিক্ষকতায়। প্রথম বেতন তুলে দিই আম্মার হাতে। আল্লাহর রহমতে জীবন চলে যায়। ১৯৭১-এর পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে আমার বাবার নামে কোথাও কোনো মামলা হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক এর শুরু আমার বাবার হাতে। এই জেলার প্রতিটি সৎ মানুষ জানে আমার বাবার কথা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে তার স্মৃতি রক্ষার জন্য নিয়ে যে ফাউন্ডেশন হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সব নামকরা রাজনীতিবিদ। ১৯৯৭ সালে তার মৃত্যুতে সরকারি শোক প্রকাশ করা হয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার বাবা সম্বন্ধে মিথ্যাচার শুরু হয় গত আওয়ামী রেজিমে এবং দুঃখজনকভাবে গত এক বছর ধরে একটি গোষ্ঠী যারা নিজেদের জুলাই আন্দোলনের অংশীদার মনে করে, তারাও এই মিথ্যাচারে অংশ নিচ্ছেন। মিথ্যা, গুজব ও অপবাদ সমাজ ধ্বংস করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার সারা জীবন এ দেশ আর জাতির জন্য দিয়েছি। গত বছর জুলাই এ আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশকে আশা দেখিয়েছে। আমি আশা করব, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ আমাদের ছেলে-মেয়েরা করবে না। এরা সত্যের পথে থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সততা আর পলিসি দিয়ে।

শঠতা আর মিথ্যা দিয়ে পপুলিজম কেনা যায়, কিন্তু দেশ গড়া যায় না। আসুন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, দেশপ্রেম আর নতুন প্রজন্মের সাহস আর দেশপ্রেম দিয়ে তৈরি করি একটি মর্যাদাপূর্ণ সৎ মানবিক বাংলাদেশ।’