ঈদে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলবে ৩৬ বিলাসবহুল লঞ্চ

ঈদে ঘরমুখো লঞ্চযাত্রীদের যাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তি লাঘবে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

যাত্রীসেবায় সরকারি-বেসরকারি ৩৬টি অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করবে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে। এরই মধ্যে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে সরকারি লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস। শনিবার থেকে শুরু হবে বেসরকারি লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস।

বিআইডব্লিউটিএ সূূত্রে জানা গেছে, নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধ, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ, ঈদের আগে ও পরে ৭ দিন করে ১৪ দিন নদীতে বাল্কহেডসহ ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা, নদীতে কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর টহল নিশ্চিত করা, মেরিন ক্যাডেট, স্কাউট, গার্লস গাইডের সদস্যরা যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা-নামসহ সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, থানা, নৌ-পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা নৌ-বন্দর এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী বয়া আছে কি না তা নিশ্চিত করা হবে।

এছাড়া বরিশাল-ঢাকা নৌপথে ঈদের সময় জেলেরা যাতে জাল ফেলে প্রতিন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবারহ, যাত্রীদের সচেতন করতে মাইকে প্রচারণা চালানো, জরুরি চিকিৎসাসেবা ও গভীর রাতে ঢাকা থেকে আসা যাত্রীদের বন্দর ভবনের বিশ্রামাগারে নিরাপত্তা দেয়া, অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে অস্থায়ী যাত্রী ছাউনি স্থাপন করাসহ সব পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বিআইডব্লিউটিসি বরিশাল অফিস থেকে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রুটে ১৩ দিনের বিশেষ ঈদ সার্ভিস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ঢাকা থেকে শুরু হয়েছে। মোট ৬টি জাহাজ দিয়ে আগামী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত এ সার্ভিস চলবে।

বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক/যাত্রী পরিবহন) শেখ মু. নাছিম বলেন, ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে নিয়মিত রুটের জাহাজ ও ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, হুলারহাট, মোড়েলগঞ্জ ও খুলনা রুটের যাত্রীদের চলাচলে সংযোগ-সুবিধা দেবে। ১৩ দিনের বিশেষ ঈদ সার্ভিসে ৬টি স্টিমার চলাচল করবে।

বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল স্টেশনের সহ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালে টাগবোট, পাইলটিং সার্ভিস প্রস্তুত থাকবে। ১৬৯ কিলোমিটার ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের ভাড়া বাড়বে না। বিশেষ সার্ভিসে ১১টি উপকূলীয় রুটের জন্য থাকবে সি-ট্রাক সার্ভিস। এমভি মনিরুল হক এবং এমভি বারো-আওলিয়া সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে চলাচল উপযোগী জাহাজ দিয়ে হাতিয়া ও সন্দ্বীপের সঙ্গে চট্টগ্রামের সংযোগ রক্ষা করা হবে। ওয়াটার-বাস এবং ফেরি সার্ভিসও সব সময় সচল রাখার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে, শনিবার থেকে ঢাকা থেকে শুরু হবে বেসরকারি লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস। এ সময় এ রুটে সরাসরি যাত্রীসেবা দেবে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১ ও ৯, কীর্তনখোলা-২ ও ১০, সুরভী-৭, ৮ ও ৯, সুন্দরবন-৮, ১০ ও ১১, পারাবত-৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২, দ্বীপরাজ, ফারহান-৮, টিপু-৭, কালাম খান-১, গ্রীনলাইন-২ ও ৩।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ঈদের সময় লঞ্চে মালামাল পরিবহন অনেকটা বন্ধ রাখা হয়। এ সময় লঞ্চগুলো মালামাল পরিবহন বন্ধ রেখে লোড লাইনের ওপর ভিত্তি করে যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লোড লাইনের ওপরে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে কোনো লঞ্চকে সুযোগ দেয়া হবে না। ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর মনিটরিং ছাড়াও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নৌপথে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ মতবিনিময় সভা করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ।

সভায় জনভোগান্তি রোধে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান বিএমপির নবাগত কমিশনার মোশারফ হোসেন। সভায় তিনি বলেন, লঞ্চযাত্রীদের নিরাপত্তায় বরিশালে নৌ-বন্দর অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। চুরি, ছিনতাই ও পকেটমার, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির তৎপরতা ঠেকাতে সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ, লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে যান চলাচল না করা ও বেপরোয়া গতিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।