একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আজ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আজ রোববার। এরই মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। ৩০০ আসনের মধ্যে একজন প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। স্থগিত হওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে ২৭ জানুয়ারি।

নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। সিইসি বলেছেন, কোনো বাহিনীর নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ব্যাহত হলে অধিক্ষেত্রের বাইরে গিয়ে তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটারের জন্য মোট ৪০ হাজার ১৮৩টি নির্বাচনী কেন্দ্র, দুই লাখ ছয় হাজার ৭৭৭টি বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের সব সামগ্রী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নির্বাচনের মালামাল নিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন। এবারই প্রথমবারের মতো ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। সেসব আসনেও নির্বাচনী সামগ্রী ও জনবল পৌঁছে গেছে। ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী সামগ্রী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় তদন্ত কমিটি, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্মরত রয়েছেন।

এ নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উচ্চ আদালতের আদেশের পর বেশ কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিলের পর এখন মোট প্রার্থী এক হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে ১২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, বাকিরা দল মনোনীত।

দেশে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রতীক থাকলেও এ নির্বাচনে জোটের মেরুকরণে অর্ধেক সংখ্যক দলই দুই মেরুতে ভিড়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা ও তরিকত ফেডারেশনের ১৪ জনকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১৪৮টি আসনে মুক্তভাবে দলীয় লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে।

আর বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক দিয়েছে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিজেপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এনপিপি ও পিপিবির ৪৩ জন প্রার্থীকে। এর বাইরে জোটে থাকা অন্যদলগুলো নিজ নিজ প্রতীকে তাদের প্রার্থী দিয়েছে।

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

এদিকে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছে ইসি। এছাড়াও বিচার কার্য সম্পাদন করার জন্য মাঠে কাজ শুরু করেছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। কেন্দ্র থেকে ফলাফল ঘোষণার করারও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

২৯৯ আসনে ভোট ও একটি আসনে স্থগিত

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ৩০০ আসনের মধ্যে গাইবান্ধা-৩ আসনের একজন প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে সেখানকার ভোট স্থগিত করা হয়েছে। তার মানে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে ২৭ জানুয়ারি।

ভোট কেন্দ্র ও ভোটার

সব মিলিয়ে এবার ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র আছে। কেন্দ্রগুলোতে ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি ভোটকক্ষ আছে। মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইসির নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এর আগে কখনো সংসদ নির্বাচনে সবগুলো রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ২৯৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৮ জন প্রার্থী।

পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী 

নির্বাচনী পরিস্থিতি ঠিক রাখতে মাঠে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
মোতায়েন রয়েছে। ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার জন, আনসার প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার ও গ্রাম পুলিশ প্রায় ৪১ হাজার।

৩৮৯টি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৪১৪ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) সদস্য রয়েছেন। ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনীর ৪৮ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) সদস্য, ১২টি উপজেলায় কোস্টগার্ডের ৪২ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ও বিজিবির ৯৮৩ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০জন) সদস্য রয়েছে। ৬০০ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) র‍্যাব সদস্য ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে। এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা (র‍্যাবসহ) প্রায় ২ হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার)। তাছাড়া সারা দেশে জেলা ও মহানগর পুলিশের টহল দল নিয়োজিত আছে।

পোলিং অফিসার নিয়োগ

প্রার্থীদের পোলিং অফিসাররা সকাল ৮টার আগেই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নিয়োগপত্র দেখাবেন। অবশ্যই ওই পোলিং অফিসার দল বা প্রার্থীর মনোনীত হতে হবে। এসব বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ইসি ব্যবস্থা নেবে।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্বপালন করছেন। এর মধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।

ভোটের দায়িত্বে জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

ভোটের মাঠে ১ হাজার ৩২৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। এর মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৬৫২ জন, অবশিষ্ট ৬৭৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়াও বিচারিক কার্য সম্পাদন করার জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৬৪০ জন। নির্বাচনী অপরাধ দমনের জন্য সারাদেশে ১২২টি ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে আছে ২৪৪ জন। প্রিজাইডিং অফিসার ৪০ হাজার ১৮৩ জন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪জন।

দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক

সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। এতে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন মাঠে কাজ করবেন। ফেম্বোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ৩৮ জন। কূটনৈতিক/বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশস্থ দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন।

ছয়টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ

এবারই প্রথম ছয়টি আসনের সব ভোটার ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দেবেন। এই ছয়টি আসন হলো, ঢাকা-৩, ঢাকা-১৩, রংপুর-৩, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-২ ও চট্টগ্রাম-৯।

যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

শনিবার রাত ১২টা থেকে ভোটের দিন রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত বেবি টেক্সি/অটোরিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে স্বল্প দূরত্বের নৌযান চলাচলের ওপর।

এ ছাড়া ভোটকে সামনে রেখে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি রাত রাত ১২টা পর্যন্ত মোট চার দিন সারাদেশে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদির কাজে নিয়োজিত যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

হেলিকপ্টার বন্ধ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেসরকারি হেলিকপ্টার চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত নিষেজ্ঞা আরোপ করো হয়েছে।

ফলাফল ঘোষণা

প্রতিটি ভোটকেন্দ্র থেকেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রেই ভোট গণনা করবেন। এ সময় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীর এজেন্টরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। ভোট গ্রণনা শেষে প্রিজাইডিং অফিসার লিখিত ফলাফল সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করবেন। পরে এ ফলাফল রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। রিটার্নিং অফিসাররা তা নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশনের ফোয়ারা প্রাঙ্গণে স্থাপিত মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে। এ চত্বরে নির্বাচন কমিশন দশটি মনিটরের মাধ্যমে ফলাফল প্রদর্শন করবে।

নির্বাচনের পরিবেশ, ভোটারদের শঙ্কা, কারচুপির আশঙ্কাসহ নির্বাচনের আরো অনেক বিষয় নিয়ে দুইজন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এদের ভেতরে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রচারণার সময় বেশ কিছু সহিংসতার খবর আমরা পেয়েছি। অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। ভোটের দিন যাতে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। এবং কেউ যদি ভোটে কারচুপি করার চেষ্টা করে তবে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা চাই, ভোটের দিন সবাই সমান সুযোগ পাক। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমরা দেখতে চাই।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ভোটের দিন পরিবেশ ঠিক থাকবে বলে আমরা মনে করছি। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবে এবং যাতে করে ভালোভাবে ভোট দিয়ে ঘরে ফিরে যেতে পারে সেজন্য সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবি এবং পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটারদের সহযোগিতা করবে। ভোটারদের প্রতি কমিশনের পরামর্শ হলো, সবাই ভোট কেন্দ্রে যাক, দেশের মালিক হিসেবে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।

সবশেষে সিইসির আহ্বান

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি আবারো অনুরোধ করতে চাই, আপনারা আচরণবিধি মেনে চলুন। সহিংসতা পরিহার করুন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন, নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করুন। ভোটার সাধারণের কাছে অনুরোধ করি, আপনার ভোট অতি মূল্যবান। কোনো ভয়ভীতির কাছে নতি স্বীকার করবেন না, স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন হবে।

কে এম নূরুল হুদা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বলছি, দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। কারো কারণে নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। কোনো প্রার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখার নির্দেশ দিচ্ছি। প্রার্থী ও ভোটাররা যেন ন্যায্য অধিকার থেকে ভোট দিতে পারেন।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলার সর্বস্তরের সদস্যদের নির্দেশ দিচ্ছি। সহিংস ও নাশকতামূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কঠোর অবস্থান নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি। কোনো মহল ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে কোনো অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে অবশ্যই দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিয়ন্ত্রণ করবে। কোনো বাহিনীর নির্লিপ্ততার কারণে অথবা নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ব্যাহত হলে অধিক্ষেত্রের বাইরে গিয়ে তদন্ত করা হবে এবং দোষী প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলছিলেন কে এম নূরুল হুদা।

গণমাধ্যমের খবরের বরাত দিয়ে সিইসি বলেন, প্রার্থীর এজেন্টদের হয়রানি করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কোনো এজেন্টের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো  ফৌজদারি কোনো অভিযোগ না থাকলে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়ারনি করবে না। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে। এজেন্টদেরও দায়িত্ব অনেক, তারা প্রার্থীর প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা প্রার্থীর স্বার্থে কাজ করেন।

কে এম নূরুল হুদা বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার আগামীকাল সকাল ৭টার মধ্যে নির্বাচন পরিচালনার কাজ শুরু করবেন। তাঁর সহযোগীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দিবেন। নির্বাচন শুরু করার আগে তিনি ব্যালট বাক্সগুলো সবাইকে দেখাবেন, ব্যালট বাক্স খালি আছে কি না দেখিয়ে নেবেন। তারপর বাক্সটি তালাবদ্ধ করবেন। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু করবেন। নির্বাচন শেষ হলে এজেন্ট, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকদের সামনে ব্যালট গণনা করবেন। কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনী কেন্দ্রের বাইরে ব্যালট গণনা করা যাবে না। ফলাফলের তালিকা অবশ্যই প্রত্যেক এজেন্টকে সরবারহ করতে হবে।

নির্বাচনের ফলাফল হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থায় তারা কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। কেউ যদি অবৈধভাবে এজেন্টকে কক্ষ ত্যাগ করতে বলে তখন ম্যাজিস্ট্রেট বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নিতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীরা নির্বাচনের বড় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মাধ্যমে দেশবাসী নির্বাচনের সঠিক চিত্র দেখতে পারে। সংবাদ সংগ্রহ এবং পরিবেশনকালে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা স্বাভাবিক কাজ যাতে ব্যহত না হয় তার প্রতি তাদের খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বলব, তারা যেন নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলেন, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেন। যাতে একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন, নির্বাচনী প্রতিযোগিতা যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ করেছি, নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, অনেক মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে, এটা কাম্য ছিল না। সহিংসতার কারণে যেখানে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেখানে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।