কারাবন্দি খালেদা জিয়ার ইফতারে যা ছিল

কারাগারে থেকেই রমজানের প্রথম রোজা করতে হলো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। কোনো রাজনৈতিক সরকারের আমলে এটাই কারাগারে এই নেতার প্রথম রোজা। এর আগে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ১/১১ এর সময় কারাগারে ইফতার করতে হয়েছিল দুই নেত্রীকে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমউদ্দীন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টারের দ্বিতীয়তলার একটি সেলে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।

গত ১৬ মে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি। তবে আরও অন্তত ৬টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় এখনই কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারছেন না সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

তাই শুক্রবার প্রথম রোজায় কারাগারেই ইফতার করতে হলো বিএনপি চেয়ারপারসনকে। অসুস্থ হলেও প্রতিটি রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। তাই তার জন্য ইফতার ও সেহরির খাবারের ব্যবস্থা করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

আদালতের আদেশে এরই মধ্যে বিএনপি নেত্রীকে প্রথম শ্রেণীর বন্দির মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কারা সূত্রে জানা গেছে, এবার সরকারিভাবে একজন সাধারণ বন্দির জন্য ইফতারে ২৭ টাকা ২০ পয়সা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর একজন প্রথম শ্রেণীর ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা।

সূত্র জানায়, জেলকোড অনুযায়ী খালেদা জিয়ার প্রথম সেহরিতে ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি, কলা, দুধ দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনের এই তালিকায় দুধ, কলা ও সবজি ঠিক থাকলেও মাছ, মাংসের ক্ষেত্রে একেকদিন একেকটা দেয়া হবে। এছাড়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ইফতারে ছিল মুড়ি, ছোলা, পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপি, শরবত (লেবু), খাসির হালিম ও কাবাব।

কারাসূত্র আরও জানায়, খালেদা জিয়ার ইফতার ও সেহরি কারাগারের অভ্যন্তরে প্রতিদিন বাবুর্চি দিয়ে তৈরি করার পরা সেটি চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষার পরই তাকে সরবরাহ করা হবে।
এছাড়া তার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পরিবার ছাড়া অন্য কারো দেয়া খাবার ও ইফতার সামগ্রী গ্রহণ করবে না কারা কর্তৃপক্ষ। তারপরও কেউ কিছু দিতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।

এর আগে শুক্রবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের নেতৃত্বে ১০/১৫ জন নেত্রী কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জন্য ইফতার সামগ্রী নিয়ে কারাগারে যান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি না থাকায় তাদের নেয়া ইফতার সামগ্রী ফেরত পাঠানো হয়।

তখন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নেত্রী তিন মাসের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি অবস্থায় আছেন। ভেতরে তিনি কী খাচ্ছেন তা আমরা জানি না।

তিনি বলেন, আজ প্রথম রোজা। তাই আমাদের নেত্রী, আমাদের মায়ের জন্য ইফতার নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তা পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করল না।

বিগত কয়েক বছর ধরে প্রথম রোজায় ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দি থাকায় এবার তিনি এ সুযোগ পাননি।

তবে দলীয় চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতেই ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের জন্য প্রথম রমজানে ইফতার মাহফিল করেছে দলটি। শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিসক্লাবে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

ইফতার ছাড়াও প্রতিবছর গুলশান কার্যালয়ে খতমে তারাবিহ নামাজের আয়োজন করা হতো। অফিস স্টাফ ও দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে খালেদা জিয়া নিজ কার্যালয়ে তারাবিহ নামাজ আদায় করতেন। তার অনুপস্থিতিতে এবার তারাবির আয়োজন থাকলেও খতমে তারাবিহ হচ্ছে না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘প্রথম রোজায় ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের জন্য ইফতার মাহফিল করেছে বিএনপি। এ ছাড়া গুলশান অফিসে সুরা তারাবিহ পড়া হয়েছে। এবার এতিম শিশুরা ইফতারে দেশনেত্রীকে খুব মিস করেছে।’