ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, জনগণের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করে, যাদের দুর্নীতিতে আগাগোড়া মোড়া। যাদের এতো গুণ তাদের জনগণ কেন ভোট দেবে? তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কীভাবে? বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, যাদের বিবেক আছে তারা অন্তত ওদের (বিএনপি-জামায়াত) কোনোদিন ভোট দেবে না, ভোট দিতে পারে না। তাদের ভোট দিয়ে আর অশান্তি টেনে আনবে না। এই আপদকে ফিরিয়ে আনবে না। তাই ওদের স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই, বড় বড় কথা বলেও লাভ নেই।’

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নাম উল্লেখ না করে তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তারা সরকারকে নাকি টেনেই নামাবেন। এটা এমন একজন লোক বললেন তার (মওদুদ) চরিত্র কী? ছাত্রাবস্থায় অন্য একটি দল করতো। ব্যারিস্টারি করে দেশে ফেরার পর দেখলাম আমাদের বাড়ি থেকে নড়েন না। আঁঠার মতো পড়ে থাকেন। তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পিএ মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন, তার পিএ হিসেবেও এই লোকটা কিছুদিন কাজ করেছেন। তার ব্যাগ টেনেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশে আরেকটি দল আছে (বিএনপি), তারা নির্বাচনে আসেনি। এখন রাস্তায় রাস্তায় চিৎকার করে বেড়াচ্ছে। বলছে তারা সরকারকে নাকি টেনেই নামাবেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তিনি (মওদুদ) বিএনপিতে গেলেন। এরপর গেলেন জাতীয় পার্টিতে। তিনি দুর্নীতির দায়ে অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। আবার জেনারেল এরশাদ চলে যাওয়ার পর আবারও গেল বিএনপিতে। তিনি বনানীতে চিটিং করে অবৈধভাবে একটি বাড়ি দখল করেছিলেন। আদালতের রায়ে সেই বাড়িটি হারিয়েছেন। এখন সেই ব্যক্তিটিই ঘোষণা দেন সরকারকে নাকি টেনেই নামাবেন। যিনি নিজেই মাটিতে পড়ে আছেন, তিনি কীভাবে টেনে নামাবেন?’

গুম-খুন প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুম-খুন নানাভাবেই হচ্ছে, আবার যারা নিখোঁজ হচ্ছে তাদের অনেকে আবার ফেরতও আসছে। এটা কী শুধু বাংলাদেশে হচ্ছে? যুক্তরাজ্যে ২ লাখ ৪৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক গুম হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে ১৬ কোটির ওপরে জনগণ বাস করে। আমরা এতো মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কতো? উন্নতি প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরও তাদের দেশে এতো গুম হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই অভিযোগ পাচ্ছি তা খতিয়ে দেখছি। দেশে একজন স্বনামধন্য আঁতেল (ফরহাদ মজহার) আছেন তিনি নাকি গুম হয়ে গেলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তিনি খুলনায় নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা তো অহরহই ঘটছে।’ তিনি বলেন, আগে দেশের অবস্থা কী ছিল? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। আমরা সেই অবস্থার পরিবর্তন করেছি। প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ করছি। শিক্ষার হার ৭২ ভাগে উন্নীত হয়েছে। পাসের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর সেশনজট নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখনই আইপিইউ ও সিপিইউ মতো সারাবিশ্বের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা এই দুটি বৃহৎ সংস্থায় বাংলাদেশের দু’জন সংসদ সদস্যকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন, এটা একটা বিরল ঘটনা। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, সেটা বিশ্বের জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে দেখে গেছেন। অনেকে বলে নির্বাচন অবৈধ। এটা শুনে মনে হয়, যারা একথা বলে শুধু তাদেরই জ্ঞানের ভাণ্ডার আছে। আর বিশ্বের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যারা আমাদের দু’জনকে নির্বাচিত করলেন তাদের মনে হয় কোনো জ্ঞান নেই। তারা যেন না জেনেই বাংলাদেশকে ভোট দিয়ে গেলেন। দুটি সম্মেলনই অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাবিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি বাংলাদেশে কীভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হয়। বিশ্বের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও তা দেখে গেছেন।

রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার স্বীকার করেছে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে যৌক্তিক কারণে সমস্যার সমাধান করছি।