‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না ২০ দল’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব ও জোটের সমন্বয়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে। তারা চায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে। কিন্তু দেশে আর কোনো একতরফা ভোট করতে দেওয়া হবে না। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে।’

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিও দাবি করেন জোটের এ সমন্বয়ক। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া কারাগারে থাকেবন আর দেশে ভোট হবে, এমনটি হবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্ত না হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থামানো যাবে না। তাই আর কোনো কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’

বিএনপির ডাকে এই কর্মসূচি হলেও এতে ২০ দলীয় জোটের নেতারাও অংশ নেন। বেলা ১১টায় এই কর্মসূচি শুরুর কথা থাকলেও ১০টার পর থেকেই নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে হাতে হাত রেখে মানববন্ধন তৈরি করেন। কর্মসূচির নির্ধারিত সময়ের আগেই হাইকোর্টের মোড় থেকে তোপখানা রোডের সচিবালয়ের গেট পর্যন্ত রাস্তায় নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই—দিতে হবে, দিতে হবে’, ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রেসক্লাব এলাকা মুখর করে তোলেন।

সেখানে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ফুটবলার আমিনুল ইসলাম, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক এম আবদুল্লাহ, চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের মহাসচিব জেড এম জাহিদ প্রমুখ।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সাজা ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। রায় ঘোষণার তিনদিন পর গতকাল রোববার থেকে আদালতের নির্দেশে তাঁকে ডিভিশন বা প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।

খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে এরপর গত শুক্রবার বাদ জুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ করে দলের নেতাকর্মীরা। এর পরদিন গত শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রোববার ২০ দলের জোটের সভায়ও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।

আজ থেকে তিনদিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

শেষের দিন আগামী বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় অনশন কর্মসূচি পালিত হবে।