‘গৌরব ধ্বংস করছে ভুয়া মানবাধিকার সংগঠন’

দেশে মানবাধিকারের কথা বলে অনেক ভুয়া সংগঠন গড়ে উঠেছে বলে সতর্ক করেছেন জাতীয় মানাবধিকার কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘এই ভুয়া সংগঠনগুলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার গৌরব ধ্বংস করছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সর্তক থাকতে হবে।’

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের পরিচিতি সভায় বক্তব্য রাখছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

সত্যিকার মানবাধিকার কর্মীরা দেশে আইনের শাসন, সাম্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বলেও মন্তব্য করেন রিয়াজুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে মানবাধিকারের যে কথা লেখা রয়েছে তার যতটুকু অর্জন সম্ভব হয়েছে তা মানবাধিকার কর্মীদের জন্য।’

‘আমরা সাম্যের কথা বলি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলি, কিন্তু সাম্য এখনও প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। এমনকি বিভিন্ন সূচকে দেশ এগিয়ে গেলেও এখনও মানবাধিকার রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে জাতি হিসেবে আমরা অনেক এগিয়ে যাব।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল দেশের মানবাধিকার, নারী অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশার কথা বলেন। ‘দুর্বৃত্তায়নের কারণে নাগরিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে’ তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকাটা এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমাদের অধিকার হারাতে হারাতে এখন মর্যাদাহারা হয়েছি, এভাবে বেঁচে থাকা যায় না।’

অনুষ্ঠানে যাত্রা শুরু করা মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা লগ্নে আছেন নয় জন মানবাধিকার কর্মী। তাদের মধ্যে সুলতানা কামাল ছাড়াও আছেন মানবাধিকারকর্মী সাইদুর রহমান, সানিয়া ফাহিম আনছারী, ডালিয়া আফরোজ, জাহেদুল আলম টিটু, তানভীর রোজেলিন সুলতানা, সাদিয়া তাসনিম, ইভা সাহা এবং তৌফিক আল মামুন।

পরিচিতি সভায় সুলতানা কামাল বলেন, ‘মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে কোথায় যেন মানুষের উদাসিনতা, যেন এটা চর্চা না করলেও চলে। ক্রমশ মানুষ কথা বলা বন্ধ করে দিচ্ছে, প্রতিবাদ করছে না বিপদে পড়ার ভয়ে।’

‘মানবাধিকারের বিষয়টি ক্রমশ ঋণাত্বক হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে বের হয়ে আমাদের মানবাধিকার চর্চা করা উচিত।’

দুর্বৃত্তায়নের ফলে আমাদের নাগরিক বোধ হারিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘ক্রমশ সকল খানে দুর্বৃত্তায়ন হয়ে যাচ্ছে, গাড়ি ভাঙচুর করে রাস্তা আটকাতে পারলেই দাবি আদায় হচ্ছে। দুর্বৃত্তের কাছে নিয়মতান্ত্রিক অধিকার অসহায় হয়ে পড়ছে।’

‘মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ নারী বিদ্বেষীরা ক্রমশ এই দেশটা দখল করে নিচ্ছে।’

‘আমাদের এই দেশটা সৃষ্টি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী তারা ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছি। এভাবে দেশ চলতে দেওয়া যাবে না, আমরা হতে দেবো না। আমাদের অধিকার আদায়ের সাথে দায়িত্বও আছে।’

আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, সারা হোসেন, জাকির হোসেন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান প্রমুখ।