জাতীয় পার্টিকে ‘প্রকৃত অবস্থা’ উপলব্ধি করাতে চায় আ.লীগ

সমাঝোতার বাইরে গিয়ে জাতীয় পার্টির বাড়তি প্রার্থী দেওয়াকে খুব একটা আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকলেও মহাজোটের নেতৃত্বাধীন দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টি জনসমর্থন অনুয়ায়ী যে পরিমাণ আসন পেতে পারে, তেমন সংখ্যক আসনই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা অনেক আসনে অহেতুক প্রার্থী দিয়েছে। এতে মহাজোটের প্রার্থীর কোনও সমস্যা হবে না দাবি কারে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এত প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে নেমে জাতীয় পার্টি তাদের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করবে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

অবশ্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করেই জাতীয় পার্টি বাড়তি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। কিন্তু এসব আসনে তাদের উল্লেখযোগ্য ভোট নেই। আর নির্বাচনের মাঠে সেটা প্রমাণ হবে বলেই মনে করছে আওয়ামী লীগ।

অসন্তুষ্টি, মান-অভিমান, অভিযোগ-অনুযোগ থাকলেও ১৪ দলীয় জোট শরিকদের সঙ্গে আসনবণ্টনে দৃশ্যত সমাঝোতা হয়েছে আওয়ামী লীগের। ১৪ দলের শরিকরা ১৩টি আসন পেয়েছেন। বেশি প্রত্যাশা থাকলেও তিনটি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে নির্বাচনি শরিক যুক্তফ্রন্ট তথা বিকল্পধারা বাংলাদেশ। দলটির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাড়তি আসন দাবি করা হলেও আর উচ্চবাচ্য হয়নি। তবে আরেক নির্বাচনি শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি সমাঝোতা হয়েছে ‘আংশিক’। দলটি ২৬টি আসন বরাদ্দ পেলেও খুশি হতে পারেনি। তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে— এমন কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ১৪ দলের শরিকরা বরাদ্দ পেয়েছে— এমন অন্তত দুটি আসনেও প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, ‘সমাঝোতার বাইরে যেসব আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছে সেসব আসনে তাদের খুব একটা ভোট নেই। আর মহাজোটের প্রার্থীরা নির্বাচন করবেন নৌকায় যেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচন করবেন লাঙ্গল প্রতীকে। জাতীয় পার্টি নির্বাচন করতে চায়, করুক। এতে মহাজোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং জাতীয় পার্টি তাদের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারবে।’

প্রার্থীতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে— এমন অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থী আছে জাতীয় পার্টির। আবার ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কাস পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া ঢাকা-৮, ঠাকুরগাঁও-৩ এবং বরিশাল-৩ আসনেও জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছে। দলগুলোর নেতারা বলছেন, এসব আসনে উম্মুক্ত নির্বাচন হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে কিছু আসনে সমাঝোতা হয়েছে। আবার তারা আরও কিছু আসনে প্রার্থী দেবে বলে আওয়ামী লীগকে জানিয়েছে। কিন্তু অহেতুক এসব প্রার্থী দেওয়ার কোনও মানে হয় না। কেননা যেসব আসনে তাদের জেতার মতো প্রার্থী এবং ভোট আছে— সেসব আসন তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার সমাঝোতার ভিত্তিতে কিছু আসন উম্মুক্তও রাখা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে যেহেতু তারা বাড়তি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, নির্বাচনের মাঠে গিয়ে জাতীয় পার্টির নিজের অবস্থা বুঝতে পারবে তাদের সত্যিকারের অবস্থা।’

প্রসঙ্গত, রবিবার (৯ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহাজোট থেকে তাদের ২৯ জন প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা পাওয়ার পর দেখা যায় তারা পেয়েছে ২৭ আসন। জাতীয় পার্টির দাবি করা ২৯টির মধ্যে দুটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আজ সোমবার (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি মহাজোটের হয়ে ২৯টি এবং উম্মুক্তসহ ১৭৪টি আসনে নির্বাচন করবে। উন্মুক্ত নির্বাচনে মহাজোটের কোনও ক্ষতি হবে না। কারণ, মহাজোটভুক্ত যে প্রার্থী শক্তিশালী, তাকেই সমর্থন দেওয়া হবে। উন্মুক্ত নির্বাচনে পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ সৃষ্টি হবে।’

ওয়ার্কাস পার্টির নেতারা তাদের বরাদ্দকৃত আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি সহজভাবে না নিলেও তারাও খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না বিষয়টিকে। দলটির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসানবলেন, ‘নৌকার বিপরীতে লাঙ্গলের প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। হয়তো দলীয় বাধ্যবাধকতার কারণেই দিতে হয়েছে। জাতীয় পার্টি নির্বাচন করুক, আমরা নির্বাচন করবোই। ফলাফলে দেখা যাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কত ভোট পায়।’