দুঃশাসনের ‘বিদায় বাঁশি’ শুনতে পাচ্ছেন রিজভী

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যতই যড়যন্ত্র ও তৎপরতার কথা বলুক না কেন, দুঃশাসনের বিদায় বাঁশি বাজতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বলেছেন, সরকার এখন প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছে। কিন্তু শিশু-কিশোরদের জাগরণ বন্ধ করা যাবে না। এ জাগরণের ঢেউ শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। দুঃশাসনের বিদায় বাঁশি বাজতে শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধেরও আহ্বান জানান এ বিএনপি নেতা।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘কাদের সাহেব বলেছেন দেশে নাকি নানা অশুভ খেলা চলছে। তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, দেশে অশুভ সরকার থাকলে জনগণ অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে যে খেলায় অবতীর্ণ হয় তা প্রকাশ্য ও ন্যায়সঙ্গত। অশুভ সরকার ক্ষমতায় থাকলে তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান সমালোচনা, প্রতিবাদ, প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ হচ্ছে জনগণের পক্ষের শক্তির শুভ খেলা। এখানে কোনো অদৃশ্য খেলা নেই।’

‘কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন ন্যায্য ও বিবেক জাগানিয়া, তারা গোপন কিছু করেনি, তাদের আন্দোলন প্রকাশ্য ও জনসমর্থিত। কিন্তু তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কাদের সাহেবরা প্রথম কয়েকদিন করুণামাখা কথা বলছেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রায় সবাই বলেছেন কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। তাহলে এখন তাদের ওপর এই সহিংসতা কেন?’-যোগ করেন রিজভী।

রিজভীর দাবি, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়া, উন্নয়ন সহযোগী দেশ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের এই সশস্ত্র হামলাকে সহিংস হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ছাত্রলীগ আন্তর্জাতিকভাবে টেরোরিস্ট সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের সাহেবরা সেই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে তামাশা করে তাদের বাঁচানোর পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু এরা রেহাই পাবে না। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভিডিও ও ছবি পরিচয়সহ যেমন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি তাদের কাছেও সংরক্ষিত আছে।’

দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে সরকারের হুকুমে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়নি বলেও দাবি করেন রিজভী।

বলেন, ‘এরা (সরকার) কতটা নিষ্ঠুর, নির্যাতনে অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালেত আপিল করেছেন, যেন শহিদুল হাসপাতালে সুচিকিৎসা না পান। এই ঘটনায় আবারো কি প্রমাণ করার দরকার আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই পিজি হাসপাতালে সুচিকিৎসা পাবেন? হাসপাতালে সরকারি নির্দেশের বাইরে কোনো চিকিৎসা হয় না। ভিন্ন মতাবলম্বীদের সেখানে কোনো সুচিকিৎসার সুযোগ নেই।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে রিজভী বলেন, ‘বৈঠকে সকল উপাচার্য আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেছেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়েছেন। ক্ষমতার পিপাসা কত তীব্র হলে শিক্ষামন্ত্রী মাসুম শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। এতে প্রমাণিত হয় মন্ত্রীদের একমাত্র আরাধ্য হচ্ছে ক্ষমতা।’

ছাত্রলীগের সহিংস অপকর্ম ঢাকতে এবং সরকারের প্রতারণা আড়াল করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘দলীয় পান্ডাদের দিয়ে শিশু-কিশোরদের দমনের পরও ক্ষান্ত হয়নি সরকার। এখন চলছে র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে বর্বর ক্র্যাক-ডাউন। রাজধানীর ১৮ থানায় ৩৫টি মামলা দেয়া হয়েছে, এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা হাজার-হাজার শিক্ষার্থীদের জড়িত করবে তারা। এরইমধ্যে ৪৫ শিক্ষার্থীকে আটকের কথা পুলিশও স্বীকার করেছে এবং ২২ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এটা সরাসরি নির্মম আগ্রাসন।’

নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অজানা আতঙ্কে উৎকন্ঠিত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা।