নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, দায় নিচ্ছে না কেউ

সিনিয়র নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কীভাবে ফাঁস হলো তা নিয়ে এখনো অন্ধকারে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর নিজেরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এ বিষয়ে কোনো মামলা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। পিএসসি বলছে, এরপর পরীক্ষায় যাতে প্রশ্ন ফাঁস না হয়, সে জন্য কাজ করছে তারা। তবে এই প্রশ্ন ফাঁসের দায় পিএসসি বা সরকারি-সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো দপ্তর নিচ্ছে না।

সিনিয়র নার্স নিয়োগদান প্রতিষ্ঠান নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। তারা গত শুক্রবার পিএসসির মাধ্যমে এই পরীক্ষার আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে এ পরীক্ষা। শিউলি, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, কামিনী নামে চার সেটের প্রশ্নপত্র ছাপে পিএসসি। কিন্তু সব সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পরীক্ষার আগে পাওয়া যায়। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কোনো মামলা হয়নি। পুলিশও কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পায়নি। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সবাই যেন অন্ধকারে আছে।

পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কমিটি কবে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে, তা-ও জানা যায়নি।

পিএসসি সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে চার হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ৬০০ মিডওয়াইফ নিয়োগ প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় ১৭ হাজার প্রার্থী। একাধিক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষা শুরুর আগে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাওয়া যায়। পরীক্ষার হলে গিয়ে তাঁরা দেখেন ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ঢাকার বাইরে থেকে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পাঁচজন পরীক্ষার্থী কথা বলেন। তাঁদের একজন বলেন, এভাবে প্রত্যেক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলে মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন। আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, এই প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে আমাদের যে ভোগান্তি হলো তা ফিরিয়ে দেবে কে। তিনি বলেন, বাড়িতে মা গুরুতর অসুস্থ। তারপরও তিনি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। এসে দেখেন প্রশ্ন ফাঁসের পর পরীক্ষা বাতিল।

আরেক প্রার্থী বলেন, এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের চক্রকে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, তা না হলে এ ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। সঠিক তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেন তিনি। অপর আরেক প্রার্থী বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া বাবদ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ। বারবার এই খরচ কেন করব?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া ঠিক নয়। যেন ফাঁস না হতে পারে সে জন্য অধিকতর সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে। যে প্রশ্নপত্র করবে, তারই সতর্ক থাকা উচিত। পিএসসি যদি প্রশ্নপত্র করে থাকে, তাহলে তাদেরই সতর্ক থাকতে হবে।

নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তন্দ্রা সিকদার বলেন, ‘সামগ্রিকভাবেই পরীক্ষার বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছে পিএসসি। এটিতে নার্সিং ইনস্টিটিউটের হাত নেই। প্রশ্ন আমরা করি না। নতুন তারিখ হয়েছে কি না আমরা জানিই না। প্রশ্ন করার সঙ্গে বিন্দুমাত্র জড়িত নয় আমরা।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের একাধিক উচ্চ পদের কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তাঁরা। সূত্র : প্রথম আলো