প্রশ্ন ফাঁস করেই কোটিপতি তারা

বিসিএস, ব্যাংক ও সরকারি চাকরির পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জালিয়াত চক্রের চার মাস্টারমাইন্ড। এই চারজনসহ নয়জনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্যই জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির দাবি, এই নয়জনকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল উৎপাটন করা সম্ভব হয়েছে। সবমিলে এখন পর্যন্ত এই জালিয়াতি চক্রের মোট ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মালিবাগ সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোল্যা নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, গত পাঁচ দিন সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ৩৬তম বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত ইব্রাহিম এবং ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ আইয়ুব আলী বাঁধনকে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়া কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে প্রশ্ন সরবরাহের অভিযোগে রাজধানীর অগ্রণী স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ বাবুল, পিয়ন আনোয়ার হোসেন মজুমদার, নুরুল ইসলাম এবং ধানমন্ডি গর্ভমেন্ট বয়েজ স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হোসনে আরা বেগম ও পিয়ন হাসমত আলী শিকদারকে গ্রেফতার করা হয়।

মোল্যা নজরুল বলেন, ‘অলিপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতির মাস্টারমাইন্ড। কয়েক বছরে তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা আয় করেন। ইব্রাহিম, মোস্তফা ও বাঁধন বিসিএসসহ সব নিয়োগ পরীক্ষার মূলহোতা। এদের চারজনের প্রায় ১০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।’

চার মাস্টারমাইন্ডকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি’র এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের পর আলিয়া মাদ্রাসা এবং ঢাবির এফ রহমান হলের দুটি কক্ষে বসে অভিজ্ঞদের দিয়ে সেই প্রশ্ন সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করতো চক্রটি। এদের মধ্যে ইব্রাহিমের বিলাসী জীবনের খোঁজ মিলেছে। তিনি জালিয়াতি করেই ৩৬তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও তার খুলনা এলাকায় চারতলা এবং নড়াইলে ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। রাজধানীতে রূপালি মানি এক্সচেঞ্জ নামে তার একটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও সরকারি চাকরিতে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে চক্রটি। জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মোল্যা নজরুল আরও বলেন, ‘গতবছরের ১৯ অক্টোবর রাতে ঢাবির দুটি হলে অভিযান চালানো হয়। এরপর বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে নাটোরের ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানসহ এ পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূলহোতারা ধরা পড়লেও ডিভাইসের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতির হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল। অভিযান শুরুর পর আমরা এর শেষ দেখব বলেছিলাম। সর্বশেষ অভিযানে নয়জনকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে আমরা এর শেষ পর্যায়ে রয়েছি।’