ফলল না মুহিতের কথা, বাজেট বাড়াল চালের দাম

আগের বছর বন্যায় ফসলহানির পর চলতি বছর বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনে দুশ্চিন্তা কমেছে সরকারের। কিন্তু এর ফসল ঘরে তুলেছে চাল ব্যবসায়ীরা, কৃষক বা ভোক্তারা নয়।

আগের বছর ফলন বিপর্যয়ে বেড়ে যাওয়া চালের দাম চলতি বছর কিছুটা কমেছিল বটে, তবে যতটা বেড়েছিল, ততটা কমেনি। আবার রোজার আগে যাও কমেছিল, রোজা শেষে আবার বেড়েছে দাম।

আর এই বেড়ে যাওয়ার পেছনে বাজেটে চালের আমদানি শুল্ক আবার ফিরিয়ে আনাকে অযুহাত করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ধানের যখন বাম্পার ফলন, আমদানির আর কোনো প্রয়োজন নেই, তখন কেন দাম বাড়বে, নেই প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারও কাছে।

বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গর্বভরে বলেছিলেন, তার ঘোষিত কোনো বাজেট পণ্যমূল্য বাড়ায়নি, এবারও বাড়বে না। গত নয় বছরে বাজেটের পর বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যে সে রকম কোনো প্রভাব পড়েনি, এটা ঠিক। তবে এবার পারলেন না মুহিত। প্রধান খাদ্য চালের বাজারই আবার অস্থির।

২০১৭ সালের বন্যায় ফসলহানি এবং সরকারি খাদ্য গুদামে মজুদ একেবারে কমে আসার পর চালের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। এরপর সরকার চালের আমদানি শুল্ক ২৮ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং পরে পুরোপুরি তুলে নেয়। আর এবার চালের বাম্পার ফলনের পর কৃষকের স্বার্থে আবার সেই শুল্ক বহাল করেছেন অর্থমন্ত্রী। আর এতে চালের আমদানিও কমেছে, বেড়েছে দামও।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব রকম চালে কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে ১০ টাকা। আছে খুচরা বাজারের সাথে পাইকারি বাজারের দামের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবধান।

পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য থাকার কথা কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা। কিন্তু পার্থক্য দেখা গেছে চার থেকে ১০ টাকা।

পাইকারিতে মোটা চালের মধ্যে দাম বেড়েছে গুটি, বিআর-২৮, পাইজাম। পাইকারি বাজারে গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে। পাইজাম ৪১ থেকে ৪২ ও বিআর-২৮ এর দাম কেজিতে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে কেজিতে তিন টাকা করে।

আবার পাইকারি থেকে খুচরায় গুটি ও পাইজাম চালের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা, এবং বিআর-২৮ চালে কেজিতে সাত থেকে আট টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।

চিকন চালের মধ্যে পাইকারিতে বাড়েনি মিনিকেটের দাম। বিক্রি হচ্ছে ৫১.৫০ টাকা কেজি দরে। দবে খুচরা বাজারে সেই মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।

ভারতীয় নাজিরশাইল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। যা তিন থেকে চার দিন আগেও ছিল ৫৫ টাকা।

আর দেশি নাজিরশাইল চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। গত সপ্তাহে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চাল চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে।

মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতা মিজান বলেন, ‘গত তিন দিনে চাউলের দাম অনেক বাড়ছে। এই ধরেন কেজিতে ৪/৫ টাকা কইরা বাড়ছে। পাইকারি বাজারে বাড়ছে দেইখাই আমাদের এইখানে দাম বাড়ছে।’

পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামে এত পার্থক্যের কোনো যুক্তি পান না ক্রেতা সাইফুল ইসলাম। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘চাল তো পচনশীল পণ্য না, তাহলে এর দামে এত পার্থক্য কেন থাকবে?’

‘যখন খুচরা চাল কিনি তখন দেখা যায় পাইকারি দামের চাইতে কেজিতে ৮/১০ টাকা বেশি। মহল্লার দোকানে এগুলো বেশি হয়। বস্তা নিয়ে নিলে একটু সুবিধা পাওয়া যায়।’

কৃষি মার্কেট পাইকারি বাজারের চাল বিক্রেতা মনোরঞ্জন বোশাক বলেন, ‘চাউলের কাস্টমার নাই। ঈদে অনেকে বাড়ি থেকে আসার পথে চাউল নিয়া আসছে, তাই চালের চাহিদা কম। চাহিদা কম, বেচাকেনা নাই, দাম তো কমার কথা। কিন্তু কমে তো না।’

এই বিক্রেতা বলেন, ‘বাজেট ঘোষণা মানে একটা সিন্ডিকেট তৈরি। সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াবে। যদি সিন্ডিকেটটা না হয় তাহলে দাম বাড়বে না। আমরাও চাই দাম না বাড়ুক। দাম বাড়বে, আমার হুট করে কমে যাবে, এতে আমাদের লস হয়।’