ফোনে ওয়েলকাম টিউন, যাকে ফোন করেছেন সে ঋণখেলাপী

চীনের নাগরিকদের পয়েন্টের ভিত্তিতে ভাল-মন্দের এক তালিকায় ওঠানোর ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। সেদেশের বিশালসংখ্যক জনগণকে তাদের কাজকর্ম, আচার আচরণের ভিত্তিতে পয়েন্ট দেয়া হচ্ছে এবং সেই পয়েন্ট নথিভুক্ত হচ্ছে কম্পিউটারের বিশাল তথ্য ভাণ্ডারে।

কর্মকর্তারা বলছেন, যারা বেশি পয়েন্ট পাবেন তাদের জন্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ভালো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। আর যারা আইন ভাঙবেন, নিয়ম মেনে চলবেন না, তাদের নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে।

চীনে যেভাবে উচ্চ প্রযুক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে তা নজিরবিহীন। নাগরিকদের কাছ থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ সমালোচনাও থেমে নেই।

প্রত্যেক নাগরিক শুরু করছেন এক হাজার পয়েন্ট নিয়ে – যেটি ‘এ’ রেটিং হিসাবে নথিভুক্ত হচ্ছে। এরপর ভাল কাজ করলে কেউ তার পয়েন্ট দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়িয়ে নিতে পারেন। তখন তার রেটিং গিয়ে দাঁড়াবে ‘ডাবল এ’, বা ‘ট্রিপল এ’ তে। আর মন্দ কাজ করলে পয়েন্ট নামতে নামতে ‘ডি’-রেটিংয়ে গিয়ে পৌঁছাবে।

যেমন : এক নাগরিক নিজের পাড়ায় সেবামূলক কাজ করে, গরিবদের সাহায্য করে, বরফ খুঁড়ে অসমর্থ প্রতিবেশির রাস্তা সাফ করে দিয়ে বাড়তি ৬৫ পয়েন্ট পেয়েছেন। এখন তার পয়েন্ট ১০৬৫। কিন্তু এই বাড়তি পয়েন্ট তার কী কাজে লাগবে? তিনি বলছেন, এই বাড়তি পয়েন্টের সুবাদে তিনি এখন বিনাখরচে চিকিৎসা সেবা পেতে পারবেন

তাহলে মন্দ কাজ কোন্গুলো যার জন্য পয়েন্ট কাটা যাবে? প্রশাসন বলছে, মূলত আইন ভাঙলে নাগরিকরা পয়েন্ট হারাবেন। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় এর পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে।

যেমন বাড়ির উঠান পরিষ্কার না করার জন্য পয়েন্ট কেটে নেয়ার রেকর্ডও রয়েছে।

চীনের নতুন এই সামাজিক পয়েন্ট ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য সামাজিক মূল্যবোধের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা। আইন ভাঙা বা নিয়ম অগ্রাহ্য করার পরিণতিকে সামাজিক স্তরে নিয়ে যাওয়া। তবে বিষয়টা অনেকটা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে এখনও।

এ ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষকে লজ্জা দেয়ার প্রক্রিয়াও পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ঋণখেলাপীদের বাধ্য করা হচ্ছে তাদের মোবাইল ফোনে বিশেষ ওয়েলকাম টিউন বসানোর জন্য। এতে বলা হচ্ছে, ‘আপনি যাকে ফোন করেছেন সে ঋণখেলাপী- তাকে বলুন আইন মানতে- ঋণ শোধ করতে।’