বাংলাদেশে ‘কাশ্মির পরিস্থিতি’ নিয়ে দিল্লিকে রিজভীর সতর্কতা

বাংলাদেশ ‘কাশ্মিরের মতো পরিস্থিতি’ সৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে ভারতকে সতর্ক করেছেন রুহুল কবির রিজভী। বাংলাদেশে কাশ্মিরের মতো পরিস্থিতি কেন হবে, সেটি ব্যাখ্যা না করে এটির সম্ভাবনা উচিত হবে কি না, সেই প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপি নেতা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এও বলেন, ‘এদেশের জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের পক্ষে অনধিকার হস্তক্ষেপ করে তাতে জনগণের মনে ভারতের গণতান্ত্রিক ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হবে।’

মঙ্গলবার নয়াপল্টনে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী। এ সময় তিনি অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারের একটি খবর নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন।

গত ২৫ ও ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। একান্ত এই বৈঠকের বিষয়বস্তু দুই দেশ প্রকাশ না করলেও রিজভী জেনেছেন কী নিয়ে কথা হয়েছে।

‘শেখ হাসিনা ভারতের ক্ষমতাসীন মহলকে এরকম বার্তা নাকি দিয়েছেন-মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে ও পূবে-দুদিকেই পাকিস্তানকে নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে।’

বিএনপি নেতার অভিযোগ, ভারত তাদের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুমাত্র ‘জনসমর্থনহীন একটি সরকারকে’ টেকানোর জন্য বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকারকে অবজ্ঞা করছে। এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপের সামিল।

‘বাংলাদেশের প্রতি ভারতের এই নীতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে শুধু ভারতের পশ্চিমে নয়, পূবে স্বাধীন বাংলাদেশেও কাশ্মিরের ন্যায় পরিস্থিতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করা ভারতের জন্য কি উচিত হবে?’

বাংলাদেশে চরমপন্থা মাথাচাড়া দিতে পারে সতর্ক করে রিজভী আরও বলেন, ‘মনে রাখা দরকার মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা কেড়ে নিলে চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।’

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া দেয়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো থেকে বাংলাভাষীদের ঠেলে দেয়ার ‘টালবাহানা’ করা, তিস্তা চুক্তির আশ্বাস ঝুলিয়ে থাকা, রোহিঙ্গা সংকটে সহানুভূতি না পাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হয় না।’

মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের পর ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছে, প্রতিদান চেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তবে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কোনো প্রতিদান চাননি। বরং ভারতকে যা দিয়েছেন, সেটি তারা সারাজীবন মনে রাখবেন।

ভারতকে কী দিয়েছেন, সেটিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ দেশে থাকা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘সম্প্রতি শেখ হাসিনা ভারত থেকে এসে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা ভারত সারাজীবন মনে রাখবে। আমরা কিন্তু তাদের শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। অন্যদিকে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতিদান চেয়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।’

‘তাই যদি হয়ে থাকে তবে জনগণের জানার অধিকার আছে যে, ভারতের কাছে কী প্রতিদান চাওয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে কী আশ্বাস পাওয়া গেছে?’

‘প্রতিবেদনের অর্থ হচ্ছে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন একতরফা করতে গ্যারান্টি চাচ্ছেন ভারতের কাছ থেকে। এটাই একমাত্র প্রতিদান আশা করেন ভারতের কাছ থেকে, অন্য কিছু নয়।’

‘ভারতের পত্রিকায় যে প্রতিদানের কথা বলা হয়েছে তা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর ইঙ্গিত।’