‘বাংলাদেশ যেভাবে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে’

পাকিস্তানের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ডন পত্রিকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা তুলনা করে বিশাল কলাম প্রকাশিত হয়েছে। কলামটির শিরোনাম দেয়া হয়, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে যেভাবে’।

পাকিস্তানের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পারভেজ হুদভয়’র লেখা কলামটি প্রকাশিত হয় ০৯ ফেব্রুয়ারি। ইত্তেফাকের পাঠকদের জন্য এটির সংক্ষেপিত অনুবাদ নিম্নরূপ:

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কোন স্বর্গ নয় বাংলাদেশ। কিছুদিন আগেও দেশটি ছিল অতিরিক্ত জনসংখ্যা অধ্যুষিত ও দরিদ্র। দেশটিতে শিক্ষার হারও ছিল অনেক কম আর দুর্নীতির পরিমাণ ছিল বেশি। মাঝে মাধ্যেই দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দেয়। গণতান্ত্রিক অবস্থাও প্রহসনমূলক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই বাংলাদেশই হবে আগামীর ‘এশিয়ান টাইগার’।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক আট শতাংশ। যা নিয়ে টক্কর দিচ্ছে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেশ ভারতকে। যেখানে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক নিচে পাকিস্তান।

বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ যেখানে ৪৩৪ ডলার সেখানে পাকিস্তানের ৯৭৪ ডলার। আর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলার পাকিস্তানের তা চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগটাই হয়েছে রফতানি থেকে। ১৯৭১ সালে শূন্য থেকে শুরু করলেও এখন যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। পাকিস্তানের সেখানে মাত্র ২৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন। সুতা উৎপাদন না করেও পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, যেখানে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাংলাদেশ আর পাকিস্তান এখন দুটি আলাদা জায়গায় দাঁড়িয়ে কারণ উভয় দেশ নিজেদের জাতীয় স্বার্থ চিহ্নিত করেছে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই বাংলাদেশ নিজেদের ভবিষ্যৎ ধরে নিয়েছে। তাদের গোলপোস্ট হলো, রপ্তানি বৃদ্ধি, বেকারত্ব হ্রাস, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঋণ ও সাহায্যের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানো এবং ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহার বৃদ্ধি।

ভারতের সঙ্গে নদী ও সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা রয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান নিয়ে নানা বাজে কথা শোনায়। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ তার অগ্রাধিকার থেকে সরে আসেনি। যেখানে পাকিস্তানের নীতি ভিন্ন।’’

এর আগে ২০১৮ সালের ৩ জুন তারিখেও বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অর্থনীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে কলাম প্রকাশিত হয়। ‘যে কারণে আমরা পিছিয়ে আছি’ শিরোনামে কলামটি লিখেছিলেন পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবী তাসনিম সিদ্দিকী।