ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগকে কীভাবে দেখছে আ’লীগ?

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগকে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন: ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগের বিষয়টি তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এর সঙ্গে সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের জন্য দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা না চাওয়ায় জামায়াতে ইসলামী থেকে শুক্রবার পদত্যাগ করেন দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত শীর্ষ জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবীর পদত্যাগের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি বেশ আলোচিত ইস্যু।

জামায়াতের অন্যতম শীর্ষ এ নেতার পদত্যাগে বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে দলটি নতুন নামে আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা, দ্বিতীয়ত তার পদত্যাগে সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা?

এর পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত শীর্ষ জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবীর পদত্যাগকে কীভাবে দেখছে আওয়ামী লীগ?

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন: জামায়াত নাম পরিবর্তন করে রাজনীতিতে আসলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নূন্যতম ছাড়ের সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধের বিচারে আওয়ামী লীগ আগের মতই শক্ত অবস্থানে রয়েছে। জামায়াতের বিষয়ে নমনীয় হওয়ার কারণ নেই।

তবে জামায়াত অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলে তারপর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এ বিষয়ে বলেন: ৭১’এ জামায়াত ইসলামীর ভূমিকা ছিল স্বাধীনতা এবং জনগণের বিপক্ষে। দলটি এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশে গণহত্যা থেকে শুরু করে ধর্ষণ অগ্নি সংযোগের মতো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলো।

তিনি বলেন: এ অপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচারের দাবি ছিলো জনগণের। সেই বিচার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন জামায়াত নেতার বিচার হয়েছে এবং দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত তাদের কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। তাদের অনেক আগেই ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিলো। আমি মনে করি তারা যে নামেই আসুক না কেন, তাদের এদেশে রাজনীতি করার আর কোনো নৈতিক অধিকার থাকতে পারে না।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো পদত্যাগ পত্রে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেছেন: জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি এবং একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার আলোকে এবং অন্যান্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিবেচনায় এনে নিজেদের সংস্কার করতে পারেনি।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক লিখেছেন: ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি এবং এখনও করি যে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয় বরং তৎপরবর্তী প্রজন্মকে দায়মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি কর্তব্য।’

পদত্যাগপত্রে তিনি আরও লিখেছেন: ‘‘অতীতে আমি অনেকবার পদত্যাগের কথা ভেবেছি। কিন্তু এই ভেবে নিজেকে বিরত রেখেছি যে, যদি আমি অভ্যন্তরীণ সংস্কার করতে পারি এবং ’৭১ এর ভূমিকার জন্য জামায়াত জাতির কাছে ক্ষমা চায়, তাহলে তা হবে একটি ঐতিহাসিক অর্জন। কিন্তু জানুয়ারি মাসে জামায়াতের সর্বশেষ পদক্ষেপ আমাকে হতাশ করেছে।’’

তবে একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে দলের অনমনীয় অবস্থানের কারণে তিনি পদত্যাগ করলেও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান বলেছেন: ‘ব্যারিস্টার রাজ্জাক যেখানে আর যেভাবেই থাকুন, তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ‘মহব্বতের সম্পর্কই’ থাকবে।’’