যৌতুক না পেয়ে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

গাছের সাথে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বাঁধা এক নারী। রড, শাবল ও তাল গাছের ডাল দিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানো হচ্ছে তাকে। সজোরে আঘাত করা হচ্ছে তলপেটে, বুকে। কখনোবা চুলের গোছা ধরে সজোরে দেয়া হচ্ছে টান। চারিদিকে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করছে কয়েক জোড়া উৎসাহী চোখ। কখনোবা তারাও নির্যাতনে করছে সহযোগিতা।

তবে এক্ষেত্রে নির্যাতনের চিত্রটা কিছুটা ব্যতিক্রম। কারণ এখানে নির্যাতনকারী কোন পুরুষ নয়। দু’জন নারী। নির্যাতনের শিকার নারীর অত্যন্ত আপন দু’জন। একজন তার জা (স্বামীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী) অপরজন তার ননদ।

শনিবার সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের আড়ংগাছা গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে মধ্যযুগীয় কায়দায় এভাবেই নির্যাতন করা হয়েছে এক গৃহবধূকে।

জানা গেছে পর পর দুটি কন্যা সন্তান জন্মদান ও যৌতুকের কারণে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন ওই গৃহবধূ। নির্যাতিত গৃহবধূর নাম মাহফুজা খাতুন (৩০)। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নূরনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজিপুর গ্রামের আব্দুল গফফারের মেয়ে।

মাহফুজার স্বামী উপজেলার রতনপর ইউনিয়নের আড়ংগাছা গ্রামের অহিদুল্লাহ গাজী। শনিবার রাতেই পুলিশ নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মাছুমা বেগম (৩০) ও মর্জিনা বেগম (২৫) নামে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আহত গৃহবধূ বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আড়ংগাছা গ্রামের এক বাসিন্দা জানান: ১৪ বছর আগে চড়া যৌতুক দিয়ে বিয়ে হয় শ্যামনগর উপজেলার নূরনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজিপুর গ্রামের আব্দুল গফফারের মেয়ের সাথে রতনপর ইউনিয়নের আড়ংগাছা গ্রামের অহিদুল্লাহ গাজীর। তবে পর পর দুটি কন্যা সন্তনের জন্ম দেয়ায় মাহফুজার উপর ক্ষুদ্ধ হন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেই সঙ্গে বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক আনার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় মাহফুজাকে। এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাহফুজা তার বাবার বাড়ি চলে যায়।

কিছুদিন পর অহিদুল্লাহ গাজী মাহফুজাকে একটি ভুয়া তালাকনামা পাঠায়। পরে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলে শনিবার সকালে মাহফুজা তার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যায়। ওই দিন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঘর থেকে মাহফুজাকে টেনে হিচড়ে বের করে তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা। এরপর গাছের সাথে বেঁধে রড, তালগাছের ডাল ও শাবল দিয়ে মারধোর করা হয় তাকে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মাহফুজা অচেতন হয়ে পড়লে তাকে মৃত ভেবে পালিয়ে যায় পরিবারের সবাই।

পরে স্থানীয়রা কালিগঞ্জ থানায় খবর দিলে পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় মাহফুজাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে।

তবে উল্টো সুর শোনা যায় রতনপুর ইউনিয়নের আড়ংগাছা গ্রামের চেয়ারম্যান আশরাফুল হোসেনের কণ্ঠে। তিনি বলেন: ‘প্রায় ১৪ বছর আগে মাহফুজার সাথে অহিদুল্লাহ গাজীর বিয়ে হয়। এ দম্পতির ঘরে তাপসিয়া (১৩) ও তন্বী (৮) নামে দুটি মেয়ে রয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন আগে মাহফুজাকে তালাক দেন তার স্বামী অহিদুল্লাহ। এরপর গত শনিবার মাহফুজা তার শ্বশুরবাড়ি এসে হৈ চৈ ও ভাংচুর করলে তাকে তার ননদ এবং জা গাছের সাথে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেয়।’

নারী নির্যাতনঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কালিগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মাঈনউদ্দীন হাসান বলেন: ‘খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি পারিবারিক কলহের জের ধরেই নির্যাতন করা হয়েছে গৃহবধূ মাহফুজাকে। অহিদুল্লাহ মাহফুজাকে একটি তালাকনামা পাঠানোর পর শনিবার মাহফুজা তার শ্বশুরবাড়িতে গেলে, তাকে গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালায় তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন।’

এ ঘটনায় নির্যাতিত গৃহবধূর ছোট ভাই লাভলু মোল্লা বাদী হয়ে মাহফুজার স্বামীসহ ৭ জনের নামে থানায় মামলা দায়েরকরেছে। সে দিন রাতেই মর্জিনা ও মাসুমা বেগম নামে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।