রাজধানীর মাদক ব্যবসায়ীরা এখন আত্মগোপনে

মাদকবিরোধী অভিযানের মুখে রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার শতাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এখন আত্মগোপনে। গত এক সপ্তায় পুলিশ এসব মাদক ব্যবসায়ীর বাসা ও আখড়ায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

পুলিশ সূত্র বলছে, বিশেষ অভিযান শুরুর পর এরা ঘর ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে প্রকোপ কমলেও থেমে নেই মাদক ব্যবসা। মাদক ব্যবসায়ীরা অনেকে আত্মগোপনে থেকে মোবাইলে মাদক নেটওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছে। সীমিত পরিসরে ক্যারিয়ার দিয়ে চালাচ্ছে নিজেদের নেটওয়ার্ক।

সূত্র জানায়, কমলাপুর, খিলগাঁও ও শাহজাহানপুরে রয়েছে একাধিক মাদক সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে প্রায় দুই ডজন সদস্য। এরা অধিকাংশই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও আশপাশ এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এরা এখন কেউই এলাকায় নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্যারিয়ার বলেন, আমি ক্যারিয়ার- কেউ মাদক চাইলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এনে দেই। বিশেষ অভিযানের আগেও ইয়াবা সাধারণত ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করতাম। বিশেষ অভিযানের পর এর মূল্য এখন ৫০০তে দাঁড়িয়েছে। তবু পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। আগে কল দিলেই পাওয়া যেত। এখন ৫০০ টাকা হলেও কমপক্ষে এক দিন আগে জানান দিতে হয়।

তিনি আরো বলেন, র‌্যাব-পুলিশের বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে ২০ জনের বেশি ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। এদের মধ্যেও কেউ কেউ মোবাইল ফোনে মাদকের নেটওয়ার্ক অব্যাহত রেখেছে।

তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নগরজুড়েই ছিল মাদকের নেটওয়ার্ক। তার মধ্যে মিরপুর, কাফরুল, আগারগাঁও এলাকা থেকেই আত্মগোপনে গেছে কমপক্ষে অর্ধশত ব্যবসায়ী। এরা আত্মগোপনে থেকে এলাকা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছে।

পুরান ঢাকার ইসলামবাগ, আগামসি লেন, বাংলাদেশ মাঠ, হাজারীবাগ, আমলীগোলা বালুর ঘাট, আমিনবাজার, গাবতলী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে আত্মগোপনে গেছে আরো অর্ধশত চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।

গতকাল পুরান ঢাকার বাংলাদেশ মাঠ এলাকার এক বাসিন্দা বলেছেন, যারা মাদক ব্যবসায় যুক্ত ছিল তাদের এখন দেখা যাচ্ছে না। তাদের ভাই-ব্রাদারকে জিজ্ঞেস করলে তারা দাবি করেন বেড়াতে গেছে। এর বেশি আর কিছু বলেন না।

তিনি আরো বলেন, কার্যত মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে এরা গ্রেফতার ও বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গত বৃহস্পতিবার বলেন, মাদকমুক্ত নগরী গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছি। জঙ্গিবাদ যেমন দমন করেছি মিডিয়াসহ সর্বস্তরের মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে মাদককেও নির্বাসনে পাঠাতে সক্ষম হব।

তিনি বলেন, যারা আত্মগোপনে গেছে তাদেরও তালিকা আমাদের কাছে আছে। যদি তারা মাদক বাদ দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায় আমরা সহায়তা করব। কিন্তু আর একজনকেও ঢাকা নগরীতে মাদক ব্যবসা করতে দেব না।