রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে ফেসবুককে

বিশ্বের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি করতেই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের আবির্ভাব। কিন্তু মিয়ানমারে কয়েক যুগের জাতিগত সহিসংতা বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে বড় ভূমিকা ছিল জনপ্রিয় এই সোশ্যাল মিডিয়ার।

দেশটিতে নিরীহ সামাজিক মাধ্যমটি এমন ভয়াবহ এক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে যে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াংহি লি বলেছেন, ‘এটা ভীতিকর যে মিয়ানমারে ফেসবুককে হিংস্র জন্তুতে রূপান্তর করা হয়েছে।’

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদনের পর নড়েচড়ে বসেছে ফেসবুক। তবে, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যোগাযোগের সেতুবন্ধনের মাধ্যমটিকে ব্যবহার করে তারা কিভাবে ঘৃণা ছড়াতে তৎপর হয়ে উঠলো?

এ বিষয়ে মিয়ানমারে জাতিগত সম্প্রীতি রক্ষার সংস্থা সাইনার্জির পরিচালক থেট সুয়েই উইনের ভাষ্য, অং সান সুচির সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারে ইন্টারনেট ও মোবাইলের সিম কার্ড সহজলভ্য হয়েছে। স্বাধীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের পাশাপাশি স্বল্প মূল্যে সিম কার্ড ক্রয় করতে পারছেন। তার দাবি, ইন্টারনেট মিয়ানমারের নাগরিকদের কাছে নতুন কিছু। তাই এ সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও না থাকায় তারা অপপ্রচার, মিথ্যাচারের সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছে।

বিবিসি অ্যাকশনের এলিজাবেথ মিয়ার্নস জানান, স্বল্পমূল্যে ফোন কেনার পর মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রথম চাহিদা থাকে ফেসবুক অ্যাপের দিকে। সেটি পাওয়ার পরই তারা দোকান থেকে বের হয়। কারণ গুগলসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থাকলেও একমাত্র ফেসবুকেই বার্মিজ ভাষায় লেখা যায়।

জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর চিত্র উঠে এসেছে রয়টার্সের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, ফেসবুকে মারাত্মক মাত্রায় ঘৃণাপূর্ণ ১ হাজার বার্মিজ পোস্ট পাওয়া গেছে। যেখানে ‘ঘৃণাপূর্ণ মন্তব্য, নগ্ন ছবি দেখতে-পড়তে গিয়ে প্রতিবেদক নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। এসব পোস্টে রোহিঙ্গাদের কুকুর, শুকর বলে চরম ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো কথায়, ছবিতে ভর্তি। তাইতো ঘৃণ্যতম গণহত্যার পরও বার্মিজদের মধ্যে এর প্রতিবাদ-প্রতিরোধের লেশমাত্র দেখা যায় না।