পাহাড় ধসে তিন জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬
ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় পাহাড় ধসে অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যুর খর পাওয়া গেছে। ধসে পড়া মাটির নিচে চাপা পড়ে আছেন সেনা সদস্যসহ বেশ কয়েকজন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী রাঙামাটিতে ৪৭ জন, চট্টগ্রামে ১২ জন এবং বান্দরবানে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। অতিবর্ষণের কারণে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং স্থানীয়রা সকাল থেকে উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত রয়েছে। তবে যেসব এলাকায় ধসের ঘটনা ঘটেছে তার বেশ কয়েকটি দুর্গম হওয়ায় উদ্ধার কাজ পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাঙামাটিতে নিহত ৪৭
সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়, রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৪৭ জন নিহত হয়েছেন।
রাঙামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনাসদস্যসহ ২০ জন মারা যাবার খবর পাওয়া গেছে। বাকি ২৭ জন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত হন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান মঙ্গলবার বিকালে বলেন, রাঙামাটি মানিকছড়ি সেনা ক্যাম্পের সামনে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক যান চলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে ক্যাম্পের পাহাড় ধসে চার সেনা সদস্যরা নিহত হয়েছেন। সকালে শহরের যুব উন্নয়ন, ভেদভেদী, শিমুলতলি, রাঙাপানিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাহাড় ধসের খবর আসতে থাকে। পরে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে হতাহতদের আনা হয়।
রাঙামাটি জেলার সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার জানান, সদর হাসপাতালে ১৭টি মৃতদেহ আছে। এর মধ্য ১৫ জনকে মৃত্যু অবস্থায় আনা হয় এবং দুজন চিকিৎসাধীন আবস্থায় মারা গেছে।
রাঙামাটি থেকে হিমেল চাকমা জানান, নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- রুমা আক্তার, নুরি আক্তার, জোহরা বেগম, সোনালি চাকমা, অমিত চাকমা, আয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস, মাহিমা আক্তার, মো. বাবু। বাকিদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
নিহত তিন সেনা সদস্য হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর ও সৈনিক শাহিন। এছাড়া আহত অবস্থায় পাঁচ সেনা সদস্য হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বান্দরবানে সাতজনের মৃত্যু
বান্দরবান প্রতিনিধি মং খিং জানিয়েছে, এই পাহাড়ি জেলায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। ভারী বর্ষণে সোমবার দিবাগত রাতে জেলার কালাঘাটা, আগাপাড়া ও জাইল্লাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতদের মধ্যে আছে শহরের আগাপাড়ার একই পরিবারের শুভ বড়ুয়া, মিঠু বড়ুয়া, লতা বড়ুয়া ও কালাঘাটা কবরস্থান এলাকার রেবি ত্রিপুরা। জাইল্লাপাড়ায় একই পরিবারের মা কামরুন্নাহার ও মেয়ে সুফিয়া। অন্যদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
চট্টগ্রামে ১২ জনের প্রাণহানি
ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় পাহাড় ধসে শিশুসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ধসের ঘটনায় আহত হয়েছেন দুইজন। তাদেরকে বান্দরবান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভোরে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের শামুকছড়ি ও চনগুনিয়া চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় আরও আট জন নিহত হয়েছেন।
ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম এ হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুরে চারজন এবং রাজানগরে চারজন করে পাহাড় ধসে আটজন নিহত হয়েছেন। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন