অকালে নিভে যেতে চায় না প্রতিবন্ধী তৌহিদ, বাঁচার আকুতি

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না…ও বন্ধু। কালজয়ী গানের এই পঙতিগুলো যেন এখন প্রতিবন্ধী অদম্য কিশোর তৌহিদের চোখে-মুখের ভাষা।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের তৌহিদের জন্ম থেকেই নানা সমস্যার সাথে পরিচয়। তারমধ্যে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে সে হয়ে যায় প্রতিবন্ধী। তার ঘাড়ের হাড় উচু হয়ে যায়।

এই সব সমস্যাকে মাথায় নিয়ে অদম্য ইচ্ছা শক্তির বলেই ৫ম শ্রেণী পাশ করে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ভর্তি হয় বোয়ালিয়া ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেসময় পিতৃস্নেহ চিরকালে হারিয়ে ফেলেন তৌহিদ, তার পিতা মারা যান।

এরপর থেকে তার শুরু হয় আরেক জীবন সংগ্রাম। হাল ধরতে হয় সংসারের। ছোট্ট বয়স আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে সৎপথে কায়িক পরিশ্রম করে রোজগার করতে হয় তাকে।

তবে পড়ালেখা বাদ দেননি তৌহিদ। নিজের প্রচেষ্টা আর শিক্ষকদের সহযোগীতায় ২০১৮ সালে জিপিএ-৩ নিয়ে এসএসসি পাস করে সে।

এদিকে সংসার সামলাতে সে চালাতে থাকে ভ্যান। কলারোয়া বাজারের রফিক মাইকের প্রচার কাজে ব্যবহৃত ভ্যান চালিয়ে এখন তার জীবন চলছে। সে অন্য কোন ভাড়া টানতে পারে না। প্রচার মাইকে একটি ব্যাটারি ও মাইক ছাড়া কিছুই থাকে না কিন্তু ভাড়ায় চালিত ভ্যানে মানুষজন কিংবা পণ্য বহন করতে হয়, যেটা তার ওই শরীরে দ্বারা অসম্ভব।
এদিকে, দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার শারীরিক যন্ত্রণা। শরীরে কষ্টের তীব্রতা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় একপর্যায়ে তার ভ্যান চালানো বন্ধ হয়ে যায়। ভ্যান চালানো মাঝে মধ্যে চলে আবার মাঝে মধ্যে বন্ধ রাখতে হয় শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে। এভাবেই অভাবের ঘূর্ণিপাকে পড়েছে তার জীবন জীবিকা। হাত পেতে ভিক্ষা করে নয়, পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে চায় তৌহিদ।

এলাকাবাসী ও শিক্ষকদের সহযোগীতায় নিয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হন বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজে। কিন্তু দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনী। অর্থের অভাবে বই ক্রয় ও ফরম পূরণ করতে পারছিলো না। কলেজের পড়ালেখা সংক্রান্ত কোন খরচ তার কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ নিতো না। পরবর্তীতে এইচএসসি’র কিছু বই ক্রয় ও ফরমফিলাপের বোর্ডের নূন্যতম খরচ যোগাতে এগিয়ে আসলো ‘আলোকিত কলারোয়া’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় গুটি কয়েক সুধিব্যক্তি। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০২০ সালে জিপিএ- ৪.০৮ নিয়ে কৃতকার্য হয় জীবন সংগ্রামী তৌহিদ।

মাঝেমধ্যে স্থানীয় কয়েকজনের অনুদান আর স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের দেয়া অর্থে তার চিকিংসা খরচ চালাতে থাকে। সে কিছুটা সুস্থতা বোধ করলেও চিকিংসক তাকে এখন উন্নত চিকিংসার জন্য অন্য ডাক্তার দেখাতে বলে। বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান পলাশকে দেখালে তিনি এই রোগকে একটি বিরল রোগে চিহ্নিত করে উন্নত চিকিংসার জন্য ঢাকায় ডা. শাহ আলমকে দেখানোর পরামর্শ দেন।

এদিকে ঢাকায় গিয়ে উন্নত চিকিংসা করার মত কোন আর্থিক সঙ্গতিও নেই তৌহিদের।

দিনে দিনে তৌহিদের শিরার যন্ত্রণা বাড়ছে। তবে জীবন যুদ্ধে হার মানতে রাজি নয় সে। শারীরিক কাঠামো যতই রাড়ছে ততই তার শিরার যন্ত্রণা বাড়বে বলে ডা. পলাশ জানান।

যন্ত্রণায় কাতর তৌহিদ বাধ্য হয়ে ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার যশোরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ঢাকা থেকে আগত একজন চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। সেখানেও একই কথা উন্নত চিকিৎসা নিতে হবে, ঢাকাতে।

প্রতিনিয়ত তৌহিদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে, নিজের চিকিৎসাসহ শারীরিক কিছুটা অক্ষমত, মায়ের চিকিৎসা আর সংসারের হাল- কোনটা টেনে ধরবে সে?

তৌহিদ জানান, ‘প্রতিবন্ধিকতাকে জয় করে সুস্থ হয়ে সে ভ্যান চালিয়ে অনার্স, মাস্টার্স পড়তে চান। ঘুচাতে চান কষ্টের ছায়া, দেখতে চান মায়ের মুখের হাসি। শুধুমাত্র অর্থের অভাবে সে উন্নত চিকিংসা করাতে পারছেন না।’

সমাজের বিত্তবান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট সে শুধুমাত্র চিকিংসার জন্য সহযোগীতা কামনা করেছে।

তৌহিদের বিকাশ নম্বর : ০১৭১০৮৬৬২৩৭