অস্ট্রেলীয় দলের ক্ষতি করেছেন কোচই!

ড্যারেন লেম্যান অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের কোচ হয়েছিলেন ২০১৩ সালে। সে সময় দলটা ছিল সমস্যা-জর্জরিত। দায়িত্ব নেওয়ার সাংবাদিকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল তাঁর প্রথম তিন অগ্রাধিকার সম্পর্কে। লেম্যান উত্তর দিয়েছিলেন, তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার ‘জয়’, দ্বিতীয় অগ্রাধিকার ‘জয়’, তৃতীয় অগ্রাধিকার সেই ‘জয়’ই। জয়ের মন্ত্রে গত পাঁচ বছরে অস্ট্রেলিয়াকে যথেষ্ট সাফল্যই এনে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যেকোনো মূল্যে জয় পাওয়ার সেই মন্ত্রই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।

বল-বিকৃতির ঘটনায় শাস্তি এড়িয়েছেন লেম্যান। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড বল-বিকৃতির তিন নায়ক হিসেবে অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, সহ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে নিষিদ্ধ করেছেন। যদিও নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এখনো জানানো হয়নি।

‘যেকোনো মূল্যে জয়’ লেম্যানের মূলমন্ত্র হলেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ভাবনাটা অন্যরকমই। সাদারল্যান্ড জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে লেম্যানকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয় তখন বোর্ডের চাহিদায় ন্যায়-নীতিবোধ অনেকটা জায়গাজুড়েই ছিল, ‘শৃঙ্খলা, ধারাবাহিকতা, সুন্দর আচরণ আর জবাবদিহি—এই ব্যাপারগুলোর উন্নতিই তাঁর কাছে চাওয়া হয়েছিল।

কিন্তু লেম্যান দলের মধ্যে এক ধরনের সংস্কৃতি গড়ে তোলেন, যেখানে ‘উদ্ধত’ আচরণকে বাহবা দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম অ্যাশেজ সিরিজে তিনি স্টুয়ার্ট ব্রডকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেটি অনেকের মধ্যেই শঙ্কার জন্ম দিয়েছিল। তিনি যে ভাষায় ব্রডকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, তেমনটি আর কখনোই কোনো অস্ট্রেলীয় কোচের মুখ থেকে শোনা যায়নি।

২৭ টেস্ট আর ১১৭টি ওয়ানডে খেলা এই সাবেক ক্রিকেটার তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনেও ‘উদ্ধত’ আচরণের জন্য সমালোচিত ছিলেন। ২০০৩ সালে ড্রেসিং রুমে তিনি ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করেছিলেন। যে কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ম্যাচে তিনি নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।

অস্ট্রেলীয় ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) সিনিয়র ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার জিম ম্যাক্সওয়েল বল বিকৃতির ঘটনায় দায় দেখেন কোচ লেম্যানেরও, ‘লেম্যানের সময় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলে এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যেখানে খেলোয়াড়দের কাছে হারের কোনো জায়গা নেই। সম্মানজনক পরাজয়ের থেকেও জোচ্চুরি করে জেতাটা তাদের কাছে অনেক বেশি সম্মানের। কোচ লেম্যান খুব ভালোমতো কাজ করছেন, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, খেলোয়াড়েরা কেমন আচরণ করবে, এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিটা খুব সংকীর্ণ।’