আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ফের জাপার বৈঠক

‘এবার আমরা কোনো আসন সমঝোতায় যাব না, আমরা এককভাবেই লাঙ্গল নিয়ে প্রায় ৩০০ আসনে নির্বাচন করব, এটা আমাদের রাজনৈতিক কৌশল’—কয়েক দিন ধরে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমন কথা বলে এলেও এবারও আসন সমঝোতা করেই নির্বাচনে যেতে চায় দলটি।

গত তিন বারের মতো এবারও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা চায় জাপা। এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও কথাবার্তা চলার পর বুধবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রথম বার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে জাপা। গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবারও জাপা নেতাদের বৈঠক হয়।

বুধবার রাতে গুলশানে একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ঐ বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও দলটির নেতাদের মধ্যে ছিলেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। গতকালও আওয়ামী লীগ ও জাপার এই নেতারা বৈঠক করেছেন।

বৈঠকের আগে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আলোচনা চলছে। আরো আলোচনা হবে। যে কোনো সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক হতে পারে।’ আসন সমঝোতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আলোচনা হচ্ছে, কিছু জটিলতা আছে, আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।’ জাপার দায়িত্বশীল সূত্র  জানায়, জাপা এবার ৫০টি আসনে ছাড় চাইছে আওয়ামী লীগের কাছে। এ নিয়ে বুধবারের বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়।

গতকাল বৈঠকে যাওয়ার আগে জাপা ৪৫ জনের একটি তালিকা করেছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কাছে তালিকাটি হস্তান্তর করা হয়। জাপার সূত্রের দাবি, ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে ছাড় পাওয়ার আশা করছে জাপা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘জাপা যে আসনগুলোতে ছাড় পাবে, সেখানে নৌকা প্রতীক না রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সায় রয়েছে। তবে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের রাখা-না রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়নি।’

জানা গেছে, জাপা ৩৫ থেকে ৫০টি আসনে ছাড় দাবি করলেও আওয়ামী লীগ প্রথমে ১০-১৫টিতে ছাড় দিতে রাজি হয়। জাপার প্রস্তাব অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ যে কয়টি আসনে ছাড় দেবে, সেগুলোতে ‘নৌকা’ প্রতীক রাখা হবে না, এ ব্যাপারে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে। যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও রাখা যাবে না—জাপার পক্ষ থেকে এমন দাবিও তোলা হয়। তবে বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি। বুধবারের বৈঠকের মতো গতকালের বৈঠকেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাপাকে জানানো হয়েছে, আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ীই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বেরও বৈঠক হবে বলে গতকালের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

বর্তমান একাদশ সংসদে জাপার আসন রয়েছে মোট ২৬টি। এর মধ্যে ২২ জন সরাসরি নির্বাচিত আর চার জন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য। জানা গেছে, জাপা এবার বর্তমানের ২২টিসহ ৩৫ থেকে ৫০টি আসনে ছাড় দাবি করেছে। কোন আসনে জাপা কেন ছাড় চায়, সে ব্যাপারে আসন ধরে ধরে দলটির পক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগও কোন কোন আসনে কেন এবার ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়, সেই যুক্তি উপস্থাপন করে।

এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাপাকে বলা হয়েছে, এবার নতুন-পুরোনো বিভিন্ন নিবন্ধিত ছোট ছোট দল ও জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, বিএনপির সাবেক কয়েক জন এমপিও অংশ নিচ্ছেন। তাদেরও আসন ছাড় দেওয়ার বিষয় রয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত জাপাকে যে কয়টি আসনেই ছাড় দেওয়া হোক না কেন, সেগুলোতে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে নিজেদের প্রার্থী রাখবে না। তবে এর বাইরে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া জাপার অন্য প্রার্থীদের দলীয় ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে এবং নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে জাপা তাতে সায় দিয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় কিছু বিষয় আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।