আক্ষেপ থেকেই জবাব দিয়েছি : তাসকিন

নোংরা মানসিকতার ফেসবুক ইউজারদের শিকার হওয়া ক্রিকেটারদের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদ। ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে দলের বাইরে থাকা এই তারকা প্রথমবার বাবা হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দিয়েছিলেন। একটি ছবি দিয়ে যে পোস্ট দেন তাসকিন আহমেদ – সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তানের ছবিও ছিল। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলে।’

পোস্ট দেয়ার কিছুক্ষণ পরে তাসকিন আহমেদের পোস্টের মন্তব্য করার জায়গায় বেশ কিছু নেতিবাচক মন্তব্য দেখা যায়, যার মূল বিষয় ছিল তাসকিন আহমেদ ও তার স্ত্রী সৈয়দা রাবেয়া নাঈমার বিয়ের সময়কাল ও সন্তান জন্ম নেয়ার সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত তাসকিন আহমেদ নিজেই বাধ্য হয়ে একটি ব্যাখ্যামূলক মন্তব্য পোস্ট করেন।

যেখানে তিনি লিখেন, ‘সবার উদ্দেশ্যে একটা কথা বলি, কেউ কিছু মনে নিয়েন না। আমার বিয়ে হইছে ১১ মাস। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে এসেই বিয়ে করলাম ৩১ অক্টোবর এবং বিয়ের বয়স হলো ১১ মাস। সাউথ আফ্রিকা ছিলাম ৪৮ দিন। সব মিলিয়ে হল ১২ মাস ১৮ দিন। আমার পুত্র সন্তান হইলো ৯ মাস ২৭ দিনে..। যদি বিয়ের আগে আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট হইতো তাহলে আমার বাচ্চা বিয়ের ৬ মাস এর মধ্যেই দুনিয়াতে থাকত। যাই হোক যাদের ভুল ধারণা ছিল আমাদের প্রতি তাদের জন্যে এই মেসেজটি…। ধন্যবাদ।’

এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে তাসকিন বলেন, ‘আমার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম আবোল তাবোল সংবাদ প্রকাশ করেছিল, তখন মানুষ সেটা বিশ্বাস করেই অনেক মন্তব্য করতে থাকে। একটা আক্ষেপ থেকেই উত্তরটা দিয়েছি। একটা ভালো মুহূর্তেও এমন মন্তব্য যারা করে, তাদের মন-মানসিকতা কেমন সেটা বলা মুশকিল!’

তাসকিনের মন্তব্যের পর অবশ্য অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাসকিনের প্রতি সহমর্মিতা ও নবাগত সন্তানকে স্বাগত জানায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের অনেকেই‌ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন আচরণে অবাক হয়েছেন। তারা তাসকিন আহমেদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। অনেকে আবার বলছেন, তাসকিন ওদের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়ে ওদের অযথা গুরুত্ব দিয়েছে।

তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক মন্তব্যের ঘটনা এটা নতুন নয়। এর আগে আরেক ক্রিকেটার নাসির হোসেন তার বোনের সাথে ছবি দেয়ার পর নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন অনেকে। সেবার ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তাজা এর প্রতিবাদ জানান। কিছুদিন নিজের ফেসবুক আইডি বাংলাদেশের জন্য রেস্ট্রিকটেড করে রেখেছিলেন ম্যাশ।

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ফেসবুক পাতায় নিয়মিত তার পরিবার নিয়ে মন্তব্য করেন অনেকেই।তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমও নিজ নিজ পরিবার নিয়ে একবার এমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।এমন মন্তব্যের কারণ কী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস মনে করেন, ‘বাংলাদেশে সমাজের যে জায়গা, সেখানে শিক্ষার হার, সচেতনতা বা ধর্মান্ধতা সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যে মিডিয়া লিটারেসি, যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তাদের সাংস্কৃতিক রুচির মান কেমন সেটার ওপর নির্ভর করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেলিব্রিটিদের যে ব্যক্তি মানস, সেই ব্যক্তি মানসকে আমরা সম্মান করতে চাইনা। তাদের যে একটা খারাপ লাগা কাজ করে এটা বুঝতে চাইনা, সেখান থেকেই এসব মন্তব্য উঠে আসে।’

-বিবিসি বাংলা