আগামী ডিসেম্বরে চালু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল

দেশের বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল ডিসেম্বরের যেকোন দিন চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। মেট্রো নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের যেকোনো দিন মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে এমআরটি লাইন-৬ প্রধানমন্ত্রী কীভাবে উদ্বোধন করবেন তার খসড়া পরিকল্পনা প্রস্তুত করার কাজ চলছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল করতে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলে জানাগেছ।

জানাগেছে, ডিসেম্বরে শুরু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল। তবে প্রথমে চালু হবে উত্তরা-আগারগাঁও অংশ। ১০টি ট্রেন দিয়ে এ অংশে শুরু হবে যাত্রী পরিবহন। এদিকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাত্রীদের মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য রাখা হবে ‘শাটল’ বাস।

এরই মধ্যে সরকারের অর্থ বিভাগের কাছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকা অনুদান বা ভর্তুকি চেয়েছে ডিএমটিসিএল। ঠিক করে ফেলা হয়েছে যাত্রী ভাড়ার হারও। মেট্রোরেলের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পুলিশ ফোর্স গঠনের কাজও রয়েছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। মুলত মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু করতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং অবচয় ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রাথমিকভাবে ১ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।

মেট্রোরেলের মুল স্টেশনটি উত্তরার দিয়াবাড়িতে। ধারণা করা হচ্ছে স্টেশনটি ঢাকার মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের মূল গন্তব্য না হওয়ায় যাত্রীর চাপ খুব বেশি হবে না। এছাড়া নির্মাণাধীন মেট্রো রুটের প্রথম অংশ উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত। আগারগাঁওয়ের কিছু সরকারি অফিস ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছাড়া মেট্রোরেলের রুটের এ অংশের প্রায় পুরোটাজুড়ে আবাসিক এলাকা।

এদিকে মেট্রোরেলের ২য় অংশ পড়েছে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মতিঝিলের মতো ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকাগুলো। এছাড়াও সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো মানুষের যাতায়াতের মূল কেন্দ্রগুলোও দ্বিতীয় অংশ থেকে কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত।

এবিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চালুর মধ্য দিয়ে ডিএমটিসিএলের মেট্রোরেল পরিচালন সক্ষমতার অনুশীলন হবে। কিন্তু অংশটি আপাতত কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা এবং যানজট নিরসনে সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে না। এজন্য পুরো মেট্রোটি চালুর অপেক্ষা করতে হবে।

এছাড়া পরবর্তী অংশ চালু হওয়া পর্যন্ত মেট্রো রুটের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানো হবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ‘শাটল’ বাসে। এজন্য বিআরটিসির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে ডিএমটিসিএল। স্বাক্ষর হতে যাওয়া চুক্তি অনুযায়ী, মেট্রোর যাত্রীদের আগারগাঁও স্টেশন থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মতিঝিল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পর্যাপ্তসংখ্যক বাসের ব্যবস্থা করবে বিআরটিসি। এর পরও বাড়তি চাহিদা তৈরি হলে বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে বাসের সংস্থান করবে ডিএমটিসিএল। একই ধরনের শাটল বাস থাকবে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকেও।

এদিকে মেট্রোরেলের শাটল বাসের কারণে আগারগাঁও স্টেশন এলাকায় যানজট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা বিশেষজ্ঞরা বললেও ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা তা মানতে রাজি নন। বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সরকারের সাবেক সচিব এমএএন ছিদ্দিক বলেন, আগারগাঁও স্টেশনের পাশে দুটি রাস্তার মাঝে যে নার্সারির মতো ছিল, ওই জায়গাটা ব্যবহার করে বাস স্ট্যান্ড তৈরি করা হচ্ছে। জায়গাটি সরকারি। মেট্রোরেলের শাটল হিসেবে ব্যবহার হওয়া বাসগুলো মূল সড়কে থেমে থাকবে না। মূল সড়ক থেকে বাসগুলো বাইরের দিকে গিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেবে। সামনে থেকে এসে আবার ঘুরে চলে যাবে। ফলে সেখানে যানজট হওয়ারও কোনো শঙ্কা নেই।

এছাড়া তিনি আরোও বলেন, উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ চালুর পর দুই প্রান্তেই শাটল সার্ভিস চালু হবে। পুরো অংশ চালু হওয়ার পর এটা আর নির্দিষ্ট সার্কুলার বাস সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সব কোম্পানির জন্য উন্মুক্ত থাকবে।