আজ পবিত্র হজ

স্বাস্থ্যবিধির নজিরবিহীন সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সৌদি আরবে সীমিত পরিসরে বুধবার এবারের হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম সৌদি আরব সরকার হজে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। হজ করতে না পেরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ মুসলমান গভীর মর্মপীড়ায় ভুগছেন। হজের আনুষ্ঠানিকতায় এবার দেখা গেছে অচেনা দৃশ্য। বিষাদের আবহেই শুরু হয়েছে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজের আনুষ্ঠানিকতা।

এ বছর ১০ হাজার হজযাত্রীর অনুমোদন থাকলেও বুধবার মিনার মাঠে এক হাজার মুসলিম শুরু করেন পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা পবিত্র মক্কা নগরী থেকে পাড়ি জমান মিনায়। মিনার খিমায় (তাঁবু) তাদের সবাই একত্রে কাটান।

বুধবার সারাদিনে তারা এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ শেষে তারা মিনা থেকে যান আরাফাতের ময়দানে। আরাফার ময়দানই হলো হজের মূল কার্যক্রম। থাকা-খাওয়াসহ এবারের হজে হাজিদের সব খরচ দিচ্ছে সৌদি আরব সরকার। হজের দ্বিতীয় দিন আরাফার ময়দানের খুতবা বাংলাসহ ১০ ভাষায় অনূদিত হবে।

এবারের হজে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ সৌদি নাগরিক ও ৭০ শতাংশ সৌদি প্রবাসী বিদেশি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের সময় ২৫ লাখ মুসলমানের অংশগ্রহণে সৌদি আরবে পালিত হয় ইসলাম ধর্মের অন্যতম ইবাদত হজ। মহামারির কারণে এবার অন্য দেশ থেকে কারও মক্কা গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সৌদি আরব। তবে দেশটিতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্য থেকে সীমিত সংখ্যক এই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। শুরুতে মাত্র এক হাজার লোক হজ পালন করবে বলে জানায় সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা তার দশ গুণে দাঁড়িয়েছে।

এবার কভিড-১৯ মহামারি ইসলাম ধর্মের এই আনুষ্ঠানিকতাকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছিল। সৌদি আরবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর কাবা শরিফেও নামাজ আদায় বন্ধ করে দিয়েছিল সৌদি সরকার। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে টানা তিন মাস ধরে লকডাউনে ছিল সৌদি আরব। এ সময় দেশটির অধিকাংশ শহরে ২৪ ঘণ্টা কারফিউ জারি ছিল।

এবারের হজে অংশগ্রহণকারীরা মক্কায় উপস্থিত হওয়ার পরপরই তাদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। হজ শুরুর আগে ও পরে তাদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মহামারির কারণে এবারের হজের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে সৌদি আরবের জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। বিধি অনুযায়ী, হজ পালনকারীরা কাবা শরিফে ও কালো পাথরে চুমু খেতে বা স্পর্শ করতে পারবেন না এবং শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর ছুড়ে মারার জন্য আগে থেকে জীবাণুমুক্ত প্যাকেটজাত পাথর ব্যবহার করতে হবে।

হজ পালনকারী ও হজে দায়িত্ব পালনকারীদের অবশ্যই সুরক্ষা মাস্ক পরতে হবে এবং তা ব্যবহার শেষে সুনির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। হজ পালনকারীরা যেখানেই সমবেত হোন না কেন, দু’জনের মধ্যে অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি পালনের জন্য ৫০ জনের সমন্বয়ে একেকটি দল গঠন করা হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে থাকবেন একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করবেন।

হজ পারমিট ছাড়া হজের জন্য পবিত্র স্থান মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে হজের পঞ্চম দিন ১২ জিলহজ পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে। অন্য দেশ থেকে আসা কেউ হজের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে এলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বুধবার ২৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করে হজে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ।

হজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সচ্ছল প্রতিটি মুসলিমের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। বিশ্বের ১৮০ কোটি মুসলমানদের জন্য হজ একটি পবিত্র মাইলফলক।

যুদ্ধ ও মহামারির কারণে এর আগেও হজ সীমিত বা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে কলেরা ও প্লেগে কয়েক বছর হজে যাননি মানুষ। এরপর থেকে হজে আর কখনও বড় কোনো বাধা আসেনি। সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছরই অনেকটা নির্বিঘ্নেই হজ পালিত হয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা, সৌদি গেজেট ও নিউইয়র্ক টাইমস।