আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামে বসেও ছেলে-মেয়েরা আয় করতে পারবে : জুনাইদ আহমেদ পলক

স্টার্টআপ এবং তরুণদের তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে দক্ষতার বিকাশের লক্ষ্যে আয়োজিত “হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর” এর গালা ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি।

হুয়াওয়ে’র উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের কৌশলগত সহযোগিতায় ছিল স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (iDEA) প্রকল্প ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ভিনসেন্ট চ্যাং, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ, এবং আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্মসচিব মো: আলতাফ হোসেন। উক্ত আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান জুনফেং।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণ গাণিতিক সমাধানে পরিণত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বিকাশমান প্রযুক্তির সমাধানগুলোই অর্থনীতির চালিকা শক্তিতে পরিণত হবে। গণিত ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবো না। তিনি আরো বলেন যে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা ছাড়া আগামীতে ব্যবসায় করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। রোবটিকস ও ডেটা এনালিটিক্স দক্ষতা ছাড়া কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম চালানোও কঠিন হয়ে পড়বে। পলক বলেন, হুয়াওয়ের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে গত ১৩ বছরে আইসিটি বিভাগ তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৪ সালে আমরা ইনফো সরকার ২ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ১৮ হাজার সরকারি অফিসকে ইন্ট্রা গভ নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করেছি যা করোনায় দেশের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন ইনফো সরকার ৩ প্রকল্পের অধীনে ২ হাজার ৬ শত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারকে ফাইবার ইন্টারেনেট সংযুক্ত করেছি। যার বদৌলতে প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও ছেলে-মেয়েরা ভালো আয় করতে পারছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। এটাই ডিজিটাল রূপান্তরের সৌন্দর্য।

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং অনুষ্ঠানে বলেন, “চীন ও বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে কাজ করে। সাম্প্রতিক সময়ে, চীনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ অবকাঠামো, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। এসব খাতের মধ্যে আইসিটি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময়। আমি আত্মবিশ্বাসী, এ দুই দেশ আরও ভালোভাবে আইসিটি খাতে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারবে এবং আমার মনে হয় চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই এর সুফল পাবে।”

অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং বলেন, “হুয়াওয়ের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তরুণদের সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করছে, এটা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।”

স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নতি হচ্ছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ ‘আর্লি স্টেজ’ ও ‘আইডিয়া স্টেজ’র স্টার্টআপগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমে একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য তরুণ স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধা নিশ্চিত করা যা আমাদের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্মসচিব মো: আলতাফ হোসেন বলেন, “দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে তরুণরা দক্ষতা ও জ্ঞানের সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায় তরুণদের নেতৃত্বে একটি উদ্ভাবনকেন্দ্রিক সংস্কৃতি বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। এমন চমৎকার একটি উদ্যোগে হুয়াওয়ের সাথে কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।”

হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী প্যান জুনফেং বলেন, “বিগত ২৩ বছর ধরে হুয়াওয়ে আইসিটি খাত, টেলিকম অপারেটর ও স্থানীয় অংশীদারদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণদের ক্ষমতায়নে, প্রশিক্ষণে এবং তাদের জন্য অভাবনীয় সব সুযোগ তৈরিতে আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই অংশ এই হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম। এ কর্মসূচিজুড়ে অংশগ্রহণকারীরা খাত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানার সুযোগ পেয়েছেন এবং তাদের ধারণাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞান অর্জন করেছেন।”

এই প্রতিযোগিতার গালা ইভেন্টে বাংলাদেশের ছয় বিজয়ী স্টার্টআপের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতায় আইডিয়া স্টেজ এবং আর্লি স্টেজ নামে দুটি গ্রুপ রয়েছে। এই দু’টি গ্রুপ থেকেই তিনটি করে স্টার্টআপ বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। আইডিয়া স্টেজে ইনসিউরকাউ এবং আর্লি স্টেজে জাহাজী লিমিটেড নামক স্টার্টআপকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষনা করা হয়। এছাড়াও ‘আইডিয়া স্টেজ’ দুর্জয় ডিএসএস (প্রথম রানার্স আপ) এবং রিল্যাক্সি (দ্বিতীয় রানার্স আপ) এবং আর্লি স্টেজে পালকি (প্রথম রানার্স আপ) ও উইগ্রো টেকনোলোজিস লিমিটেড (দ্বিতীয় রানার্স আপ) হয়।

চ্যাম্পিয়নরা প্রাইজমানি হিসেবে ৫ লক্ষ টাকা এবং ১ লক্ষ ২৫ হাজার ইউএসডি সমমূল্যের হুয়াওয়ে ক্লাউড ক্রেডিট পাবেন। এছাড়া, ৮০ হাজার ইউএসডি সমমূল্যের হুয়াওয়ে ক্লাউড ক্রেডিট ছাড়াও ১ম ও ২য় রানারআপ পাবেন যথাক্রমে ৩ লক্ষ ও ১ লক্ষ টাকা। এছাড়াও, প্রত্যেক স্টার্টআপের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা দেশের বাইরে সফল স্টার্টআপের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করা সুযোগ পাবেন।