‘আমি জাতির পিতার কন্যা, দুর্নীতি করতে আসিনি’

পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের বদলে আওয়ামী লীগের ললাটে দুর্নীতির তকমা জুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছিল- অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জাতির পিতার কন্যা দুর্নীতি করতে রাজনীতিতে আসিনি। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলাম; তার দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করুক। পারেনি! উল্টো আমরা এখন নিজেদের টাকায় শুধু পদ্মাসেতুই করছি না, রেল সেতুও হচ্ছে।

রোববার বিকেলে যশোর ঈদগাহ ময়দানে দলীয় জনসভায় ভাষণ তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান সরকারের মেয়াদে যশোরে এটিই তার প্রথম জনসভা।

শেখ হাসিনা তার ভাষণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করার পাশাপাশি খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে কোকোর দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, জিয়া পরিবারের দুর্নীতি বিদেশেও প্রমাণিত। কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সিমেন্সের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। পরে আবার টাকা পাওয়া গেলো সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুর সরকার কোকোর ওই টাকা খুঁজে বের করে। আমরা সে টাকা ফিরিয়ে এনে জনগণের উন্নয়নে কাজে লাগাচ্ছি।

‘আর কি বলবো! মাও কম যান না। এতিমের টাকা এতিমের কাছে যায় না। কোথায় যায় আপনারা বোঝেন না? যারা এতিমের টাকা মেরে খায়, তারা দেশের কি করতে পারে প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয় আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে হত্যা-খুনে দেশ ছেযে যায় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ৫ বছরে দখলদারিত্ব-লুটপাটের রাজনীতি করেছে। দেশের সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। প্রকারন্তে, আওয়ামী লীগ শান্তির রাজনীতি করে। বাংলাদেশে কোনো রক্তপাত দেখতে চাই না।

এর আগের প্রধানমন্ত্রী যশোরে মোট ২৭টি উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প (প্রথম ধাপ), সদর উপজেলার আমদাবাদ কলেজের সম্প্রসারণ কাজ, শার্শা উপজেলার পাকশী কলেজ সম্প্রসারণ কাজ, বাঘারপাড়া উপজেলার বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের সম্প্রসারণ কাজ, ৫০০ আসনবিশিষ্ট শহীদ মশিউর রহমান অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, পাবলিক লাইব্রেরির (তৃতীয় ধাপ) উন্নয়নকাজ, যশোর মেডিকেল কলেজ একাডেমিক কমপ্লেক্স, হয়বাতপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ভবন, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ভবন, মহাকাল ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ভবন, পাটিবিলা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ভবন, যশোর পুলিশ সুপার ভবন, যশোর পুলিশ হাসপাতাল, শেখ রাসেল ভাস্কর্য, যশোর শহরের ১৩ কিলোমিটার সড়ক ও ২২ কিলোমিটার ড্রেনেজ নির্মাণ, ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং অভয়নগরের মালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এছাড়াও তিনি ভৈরব নদের জলাবদ্ধতা নিরসন ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের উন্নয়নকাজ, যশোর-বেনাপোলের পলাশবাড়ী-রাজঘাট অংশের উন্নয়নকাজ, কেশবপুর টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার, যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, যশোর শহরের ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও ২৪ কিলোমিটার ড্রেনেজ নির্মাণকাজ, হামিদপুর কম্পোস্ট প্ল্যান্ট, প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বায়োপ্ল্যান্ট এবং কন্ট্রোল ল্যান্ডফিল সেল ওয়ার্ক, ঝিকরগাছা পৌরসভা সম্প্রসারণ কাজ, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ম্যুরাল, শেখ রাসেল শরীরচর্চা কেন্দ্র ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর যশোর সফর উপলক্ষে সাজ সাজ রব পড়ে জেলা শহরে। শহরের অলিগলি ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে যায়।