ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবিকে নিয়ে কেন এত রহস্য

ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবিকে নিয়ে কেন এত রহস্য!
মুখ ঢেকে রাখেন নেকাবের আড়ালে। পরনে থাকে বোরকা। পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক থেকে রাজনীতিক ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি। গুঞ্জন রয়েছে- তেরো শতকে নির্মিত একটি সুফি দরগায় ইমরানের সঙ্গে পাঁচ সন্তানের জননী বুশরার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। তখন বুশরা প্রথম স্বামীর সংসার করছিলেন। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে বুশরাকে নিয়ে আগ্রহ দেখা গেছে। অনেকেই বুশরা বিবি নামটি গুগলে অনুসন্ধান করছেন। জানতে চাইছেন ‘রহস্যময়’ এই নারী সম্পর্কে।

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা স্বামী খাওয়ার মানেকার উপাধি যুক্ত ছিল বুশরার নামের শেষে। ইমরানকে বিয়ে করে বুশরা বিবি নামে পরিচিত হন তিনি।

অনেকেই বলেন, বুশরা সুফি সাধনার সঙ্গে যুক্ত। তবে আরেক দল এ মতবাদ মানতে নারাজ। যদিও ইমরান জানিয়েছেন, সুফিবাদে আত্ম-অনুসন্ধানের প্রতি তার তিন দশকের বেশি সময় ধরে আগ্রহ রয়েছে।

বুশরার আগে ইমরানের জীবনে ছিলেন দুজন স্ত্রী। প্রথমজন ব্রিটিশ সমাজকর্মী জেমিমা গোল্ডস্মিথ। এরপর পাকিস্তানি সাংবাদিক রেহাম খান। দুজনই গ্ল্যামারাস। বিভিন্ন সময় সাময়িকীর প্রচ্ছদে ও টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেছে জেমিমা আর রেহামকে। এর ঠিক উল্টো বুশরা।

২০১৮ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গর্ব করে ইমরান বলেছিলেন, বিয়ের আগে তিনি বুশরার মুখও দেখেননি।

গত শতকের আশির দশকে যদি ইমরান এ কথা বলতেন, তাহলে তা বিশ্বাস করা কষ্টকর ছিল। কেননা দীর্ঘদিন ধরে প্লেবয়ের ভাবমূর্তি ছিল সাবেক এই তারকা ক্রিকেটারের। ওই সময় লন্ডনের নাইট ক্লাবগুলোয় অবাধ যাতায়াত ছিল ইমরানের। এখন তিনিও নিজের ভাবমূর্তি বদলেছেন।

গতকাল বুধবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের সঙ্গে তার স্ত্রী বুশরা বিবিও সাজা পেয়েছেন। তোশাখানা দুর্নীতির এক মামলার তাদের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। তাদের প্রত্যেককে ২০ লাখ ডলারের বেশি জরিমানা করা হয়েছে।

জেমিমা ও রেহাম—দুজনকেই ধুমধামের সঙ্গে বিয়ে করেছিলেন ইমরান। সেই তুলনায় ২০১৮ সালে বুশরার সঙ্গে তার বিয়ে ছিল সাদাসিধে ঘরোয়াভাবে।

ইমরান-জেমিমার বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। তখন ইমরানের বয়স ৪৩ বছর। জেমিমার ২১ বছর। ওই সময়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ একজন ধনীর মেয়ে জেমিমা। ইমরান-জেমিমার বিয়ে টিকেছিল ৯ বছর। তাদের সংসারে দুই ছেলে।

দুই দশক পেরিয়ে ২০১৫ সালে সাংবাদিক ও বিবিসির আবহাওয়া-বিষয়ক সাবেক উপস্থাপক রেহাম খানকে বিয়ে করেন ইমরান; কিন্তু এক বছরেরও কম সময় টিকে তাদের সংসার। রেহাম অভিযোগ করেন, ইমরানের সমর্থকরা তার উদ্দেশ্যে তির্যক মন্তব্য করেছেন। রেহাম সেসব তার আত্মজীবনীতেও লিখেছেন।

বলা হয়ে থাকে, বুশরার পরামর্শ নিতে ওই দরগায় গিয়েছিলেন ইমরান। এরপর ইমরান ও বুশরা বিয়ে করেন। তারও মাসছয়েক পর ইমরান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। সমালোচকরা বলে থাকেন- প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নপূরণে বুশরাকে বিয়ে করেছিলেন ইমরান।

বুশরার বয়স এখন ৪০-এর কোঠায়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে টেলিভিশনে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বুশরা। এরপর আর কখনোই তাকে সংবাদমাধ্যমের সামনে দেখা যায়নি। ওই সাক্ষাৎকারে এসব গুঞ্জন-সমালোচনাকে ‘আবর্জনা’ বলে খারিজ করে দিয়েছিলেন তিনি।

ওই সাক্ষাৎকারে বুশরা বলেছিলেন, ইমরানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের দ্রুত উন্নতি হবে বলে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তিনি; কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। ইমরানের আমলে পাকিস্তানের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের অনেককে কারাগারে ঢোকানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করা হয়েছে। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন আর সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ইমরানকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ ধরা হতো। বলা হয়, সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতায় বসেছিলেন ইমরান। যদিও চার বছর ক্ষমতায় থাকলেও ইমরানের রাজনৈতিক উত্থানের পেছনের শক্তি অজানা রয়ে গেছে। ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন ইমরান। এরপর গ্রেফতার হতে হয়। একের পর এক মামলায় জড়ায় তার নাম। কারাগারেই ছিলেন। এখন সাজা পেয়েছেন ইমরান।

শুধু ইমরান নন, তার সঙ্গে বুশরার ১৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্ষমতায় থাকাকালে পাওয়া রাষ্ট্রীয় উপহার থেকে বেআইনিভাবে লাভ করেছেন ইমরান-বুশরা দম্পতি। যদিও বাড়িতেই থাকবেন বুশরা। বুশরার বাড়িকে সাব-কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া আরও আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বুশরাকে। ইমরানের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে মামলা করেছেন বুশরার সাবেক স্বামী খাওয়ার মানেকা। ইমরান-বুশরার বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিয়ে ও ব্যভিচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

খাওয়ার মানেকার অভিযোগ, তিনি ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর বুশরাকে তালাক দেন। ইদ্দতকাল (অপেক্ষার সময়কাল) শেষ হওয়ার আগেই ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি বিয়ে করেন ইমরান ও বুশরা। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা আবার বিয়ে করেন। মুসলিম আইনে এটা রীতিসিদ্ধ নয়। এই আইনি লড়াই এখনো চলছে।